১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষের জাগরণ ঠেকানোর জন্য যে পৈশাচিক, অমানবিক ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছিল তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তৎকালীন সামরিক জান্তার জন্য কলংক বয়ে এনেছে। ঐতিহাসিকগণ ২৫ মার্চ রাতকে ‘কলংকিত এক রাত’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন-স্বার্বভৌম দেশের জনগন কখনও পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ন্যায় জঘন্য ও হিংস্র কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি আশা করেনি। যার ফলে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা কলংকিত হবে। আর কলংকের দাগ দেশটিকে বয়ে বেড়াতে হবে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে তেমনি একটি কলংকিত অধ্যায়ের সূত্রপাত করেছিল তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ। যাতে রক্তাক্ত হয়েছে পল্টন, কলুষিত হয়েছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিপন্ন হয়েছে মানবতা, কলংকিত হয়েছে দেশ, ধ্বংস হয়েছে মনুষ্যত্ববোধ আর বিকশিত হয়েছে প্রতিহিংসা, নির্মমতা, নৃশংসতা, বর্বরতা আর উগ্ররাজনীতি। যে নির্মমতা আর পৈশচিকতা হয়তবা হার মানিয়েছে আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও। ক্ষুন্ন হয়েছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বা আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে মানুষের মর্যাদা। যে আচরন পশুর সাথে পশুও করেনা শুধু মাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধের কারণে সে অমানবিক, হিংস্র ও পৈশাচিক আচরন করেছে মানুষের সাথে মানুষ। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সে লোমহর্ষক, বর্বর ও নৃশংসতার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়েছে গোটা দেশ, থমকে দাঁড়িয়েছিল কোটি কোটি মানুষ, হতভম্ভ বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের আপামর জনতা। মানুষ যেন তার চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলনা সে কি স্বপ্নের মধ্যে আছে না বাস্তবে তা দেখছে। এটা কি মানুষের কাজ না মানুষরুপী কোন অমানুষ দৈত্য দানবের কাজ। এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। অবাক হয়েছে বিশ্ববিবেক। ঘৃনা ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অসংখ্য দেশ। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের মানুষরুপী আওয়ামী হায়েনাদের আচরণ দেখে নুতন করে বাংলাদেশকে চিনার সুযোগ পেল গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদার জায়গাটিকে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অবশ্য ক্ষমতাই যাদের মূল নেশা তাদের কাছে তো মর্যাদা আর মনুষ্যত্ববোধ মূলহীন । সেদিনের সে ঘটনায় শুধু দেশ হিসাবে আমরা কলংকিত হয়নি ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসাবে সে কালিমায় সম্পৃক্ত হয়েছে গোটা মুসলিম উম্মাহ। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ৩৫ বছর পর দেশ পেল ‘কলংকিত এক দিন’। যে কলংকের তিলক মুছতে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের বহুদিন।
দেখতে দেখতে সে লোমহর্ষক ঘটনার ৮ বছর অতিক্রান্ত হতে চলছে। সময়ের গতিধারায় তা হয়তবা চলে যাবে ইতিহাসের আরো অনেক দূরে। কারণ বাংলাদেশে এমন একটি বিচিত্র দেশ যেখানে প্রতিনিয়ত বহু ইতিহাসের জন্ম হয়। ছোট দেশ হলেও ভালো মন্দ মিলে আমাদের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। তবে ইতিহাসের প্রয়োজনেই কিছু ইতিহাসকে সর্বদায় চলমান রাখা জরুরী। যাতে জাতির ভবিষ্যতের কর্নধাররা বা আগামী প্রজন্ম সে ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করে তাদের জীবন ও দেশ পরিচালনার করনীয় নির্ধারনে মৌলিক ভূমিকা পালন করতে পারেন। উদ্যোগ নিতে পারেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের। কারন কিছু ইতিহাসের কারনে জাতি হয় নন্দিত আবার কিছু ইতিহাস জাতিকে করে নিন্দিত। উভয় প্রকার ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়নই পারে একটি জাতির আগামীর পথচালাকে সুন্দর, শানিত ও গতিশীল করতে। ইতিহাসের সে ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রেক্ষিতে ইসলামী ছাত্রশিবির ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালের সে নৃশংস ও পৈশাচিক ঘটনাকে জনগনের কাছে জাগিয়ে রাখতে চায়। কেননা সময়ের পালাবদলে এ নৃশংস ও বর্বর কর্মকান্ডের ইতিহাসও বিকৃত হয়ে যেতে পারে। আওয়ামী ক্যাডারদের লগী-বৈঠার তান্ডব হয়তবা সময়ের গতিধারায় জামায়াত-শিবিরের তান্ডব বলেও ইতিহাস রচনা হতে পারে। কারন যারা সদা সর্বদায় মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত, ইতিহাস বিকৃত করাই যাদের মূল চরিত্র তাদের ব্যাপারে এ ধারনা করাটা মোটেই অমূলক নয়। ক্ষমতার স্বার্থে যারা দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতার ইতিহাসকে একপেশে করে রচনা করতে পারে তাদের জন্য এ জাতীয় ছোট ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দেয়াটা মোটেও কঠিন কাজ হবেনা।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ছিল তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন। এর আগের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও- টিভিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। শান্তিপূর্ন ক্ষমতা হস্তান্তর নিমিত্তে জোটভুক্ত সকল দল আলাদা আলাদা সমাবেশের আয়োজন করেছিল। বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের অফিসের সামনে আর জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকারমের উত্তর গেটের সামনে সমাবেশের আয়োজন করেছিল । এদিকে চারদলীয় জোটের ক্ষমতা হস্তান্তরকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে তখন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। ক্ষমতালিপ্সু শেখ হাসিনা ৫ বছর ক্ষমতার বাহিরে থাকার কারণে ক্ষমতার নেশায় উন্মাদের মত আচরণ করা শুরু করেছিল। ৪ দলীয় জোট যখন সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ন ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন তার দলের নেতাকর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ মানার জন্য আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে ভাড়া করে অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের পূর্বেই ঢাকায় এনে জমা করেছিল। যাদেরকে জনগন ২৮ অক্টোবরের দিন অস্ত্রহাতে রাজপথে দেখেছিল ইতিপূর্বে তাদেরকে আর কখনো রাজপথে দেখা যায়নি । মূলত: সেদিন ঢাকার রাজপথে একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরীর জন্য আওয়ামী লীগ পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা গ্রহন করেছিল। কিন্তু সে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি এত নির্মম, পৈশাচিক, নৃশংস, জঘন্য, অমানবিক, বর্বর ও মনুষ্যত্বহীন হবে এটা দেশর জনগন মোটেও ভাবতে পারেনি।
ঈদ পরবর্তী ঢাকা তখন ছিল প্রায় জনশূন্য। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়া তখনও সাধারন মানুষ খুব বেশী শহরমূখী হয়নি। অন্যদিকে আগে থেকেই সাধারন জনগন বুঝতে পেরেছিল ঈদ পরবর্তী দেশের রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ঈদের আগেই তার দলের নেতা-কর্মীদেরকে লগি-বৈঠা প্রস্তুত করা এবং তা নিয়ে দলে দলে ঢাকার আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন । আওয়ামী রাজনীতি যে কত জঘন্য ও উগ্র তা ক্ষমতার বাহিরে থাকলে জনগন হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করতে পারে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ জাতির কাছে ওয়াদা করেছিল তারা বিরোধীদলে গেলেও আর হরতাল করবেনা সে আওয়ামী লীগ ২০০১-২০০৬ সালে ৪ দলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছিল। তাছাড়া আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল ও ঝাড়ু–মিছিল হয়েছিল আওয়ামী নেতা-নেত্রীদের নেতৃত্বে। এক সময়তো সর্বোচ্চ আদালত শেখ হাসিনাকে ‘রং হেডেট’ বলে মন্তব্য করেছিল। সময়ের পরিবর্তনে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তার খোলস পরিবর্তন করে সাধু সাজার চেষ্টা করলেও জনগন ঠিকই তা মনে রেখে চলছে। এ জন্য তারা এখন ডিজিটাল কায়দায় জনগনের ভোটাধীকার হরণ করে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
যাহোক পূর্বনিধারিত কর্মসূচী হিসাবে ২৮ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াত সমাবেশের আয়াজন করেছিল। একই দিনে পল্টন ময়দান সহ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগ সমাবেশের আয়োজন করে। যা অনেকটা গায়ে পড়েই সংঘাত বাঁধানোর জন্যই করা হয়েছিল । জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঈদের পূর্বেই সমাবেশ বাস্তবায়নের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছিল। কারন ঈদের ১ দিন পরেই সমাবেশ। ঢাকার জনশক্তিদের ঈদের পরদিনই ঢাকায় চলে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ঈদের পরদিনই আমাদের ঢাকায় চলে আসতে হয়েছে । পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী সমাবেশের দিন সকাল ৯ টার পূর্বেই শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার জন্য বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে গিয়ে হাজির হলাম। আমাদের প্রতি পূর্ব থেকেই নির্দেশনা ছিল সংঘর্ষ পরিহার করার জন্য সর্বোচ্চ ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতে। শত উসকানির মধ্যেও যেকোন মূল্যে আমাদের সমাবেশ সফল করতে হবে। যেখানে আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। সকাল ৯ টা থেকে আমরা যার যার অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করলাম। আমরা প্রথমতঃ পল্টন মোড় ঘেঁষে শৃঙ্খলা বিভাগের জনশক্তিদের সাজাতে লাগলাম। সকাল ১০ টা থেকে আওয়ামী-যুবলীগের মিছিল আসা শুরু হল। মিছিলকারী সকলের হাতে ছিল লগি-বৈঠা, লাঠি, হকিষ্টিক সহ নানা আগ্নেয়াস্ত্র। মিছিলগুলো আমাদের পাশ দিয়ে পল্টন মোড় ক্রস করে মুক্তাঙ্গন হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিল আবার কোনো কোনো মিছিল বায়তুল মোকাররম দক্ষিন গেট দিয়ে পল্টন ময়দানের দিকে প্রবেশ করছিল। ধীরে ধীরে পল্টন এলাকা এবং তার আশেপাশের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। আওয়ামী-যুবলীগের মিছিল থেকে উসকানি মূলক স্লোগান দেয়া হচ্ছিল। সংঘর্ষ পরিহারের স্বার্থে দায়িত্বশীলেদের পরামর্শে আমরা শৃঙ্খলার বিভাগের জনশক্তিদের পল্টন মোড় থেকে সরিয়ে বায়তুল মোকাররম সংলগ্ন আজাদ প্রোডাক্টসের কাছাকাছি নিয়ে এলাম। রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে সকলকে দাঁড় করিয়ে আমরা বললাম মিছিলগুলোর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য। যে হারে আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে গুন্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে এনেছিল সে তুলনায় তখনো পর্যন্ত আমাদের উপস্থিতি পর্যাপ্ত ছিলনা কেবল মাত্র শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্বশীল ও জনশক্তিরা সেখানে অবস্থান করেছিলেন। যেহেতু বিকাল ৩ টায় সমাবেশ সে কারণে জোহরের পর থেকে সাধারন জনশক্তিকে আসার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। আওয়ামী যুবলীগের হাজার হাজার লোকের মিছিল একের পর এক পল্টন মোড় দিয়ে যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে খবর আসল আওয়ামী লীগ জুয়েলারী গলি (বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের গলি) দিয়ে আক্রমন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নুরুল ইসলাম বুলবুল ভাই ও জাহিদুর রহমান ভাইয়ের পরামর্শে আমাদের একটি গ্রুপকে পাঠানো হল জুয়েলারী গলির মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করার জন্য। দ্রুততার সাথে শৃঙ্খলা বিভাগের জনশক্তিকে সাজিয়ে মঞ্চ তৈরীর কাজ শুরু করা হয়েছিল।
সকাল ১০ টা থেকে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে আগত জনশক্তিদের লগি-বৈঠা বাহিনী দ্বারা আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে আমরা সাধারণ জনশক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব সমাবেশের দিকে আসার জন্য তাগাদা দিতে থাকলাম। বেলা ১১ টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম ও এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে দুটি মিছিল অত্যান্ত পরিকল্পিত ভাবে ধর ধর বলে এক যোগে জামায়াতের সমাবেশকে ভন্ডুল করার জন্য মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের দিকে ঢুকে পড়ে সেখানে শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্ব পালনরত জামায়াত-শিবিরের জনশক্তিদের উপর লগি-বৈঠা দিয়ে বর্বর হামলা চালায়। পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান করা নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর একযোগে হামলা করে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জামায়াত শিবিরের জনশক্তিদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল। এ হামলায় পিস্তল সহ বিভিন্ন ধারনের আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও তার বাহিনী নিয়ে যোগ দেয়। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিল ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড। পল্টন এলাকার অসংখ্য বানিজ্যিক ভবন, বিপনী বিতান সহ গুরুত্বপূর্ন অফিস আদালতে তারা আগুন লাগিয়ে দিল। রাস্তার পাশে বসে ব্যবসা করা ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যাবসায়ীদের সকল দোকানপাট জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্মীবুত করে দিল। তারা যখন মঞ্চ গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল সে সময় জামায়াত-শিবিরের জনশক্তিরা সম্পূর্ন নিরস্ত্র অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করে সামর্থ উজাড় করে দিয়ে তাদের আক্রমন প্রতিহত করে যাচ্ছিল।
পুরো পল্টন এবং এর আশেপাশে এলাকা জুড়ে চলছিল ঘন্টার পর ঘন্টা লগি-বৈঠা বাহিনীর তান্ডব। লগি-বৈঠা আর অস্ত্রধারীদের হাতে একের পর এক আহত হতে থাকে অসহায় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম তখন পল্টন মোড়ের কাছে অবস্থান করছিলেন। তাকে দেখে এক যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর। আওয়ামী হায়েনাদের লগি-বৈঠার উপর্যুপরি আঘাতে আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মুজাহিদ। তার পর নরপিশাচরা লগি-বৈঠা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে নির্মমভাবে শহীদ করে । জামায়াত কর্মী জসীমকে প্রীতম হোটেলের সামনে একাকী পেয়ে লগি-বৈঠা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা শুরু করে। তিনি বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রতিবারই তাকে আঘাত করতে করতে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছিল। এলোপাতাড়ি আঘাতের পর আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা তার লাশের ওপর ওঠে নৃত্য উল্লাস করতে থাকে। এই দৃশ্যই টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখা যায়। সেদিন আওয়ামী হায়েনারা জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমানকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি লাশটি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল গুম করার জন্য। কিন্তু পুলিশের সহায়তায় যখন লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলো সেখানেও চলতে থাকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম বাহিনীর লাশ দখলের খেলা। তারা নকল বাবা মা সাজিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল লাশটি। পরবর্তীতে এ কারসাজি ধরা পড়ায় নকল বাবা মা সটকে পড়ে। এখানেই শেষ নয় আওয়ামী লীগ হাবিবুর রহমানকে নিজেদের কর্মী দাবী করে তার লাশের ছবি ব্যবহার করে পোষ্টারও ছেপেছিল। লাশ নিয়ে রাজনীতির এর চেয়ে জঘন্য নমুনা আর কী হতে পারে?
লগি-বৈঠা বাহিনীর হাত থেকে সমাবেশের মঞ্চ ও নেতৃবৃন্দকে রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন ছাত্রশিবিরের সাথী হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন। শিপনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য নরপিশাচরা তার হাত ধরে যখন পাল্স দেখছিল তখন তার মুখ নড়ে উঠায় বাঁশের মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এ হাফেজে কোরআনের দাঁতগুলোকে তারা ফেলে দিয়েছিল। মানুষ নামের জীবের পক্ষে এটা কি ভাবে সম্ভব? এরা কি মানব না দানব! হায়রে মানবতা: হায়রে মনুষ্যত্ববোধ। ধিক আওয়ামী লীগ ধিক! শিবিরের সাথী সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুমের মাথায় ইট দিয়ে উপুর্যুপরি আঘাত করায় তার মাথায় মগজগুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে গিয়েছিল। তিনদিন অজ্ঞান থাকার পর তিনিও শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। এত কিছুর পরও সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা অবধি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা ঈমানের বলে বলীয়ান আওয়ামী লীগ লগী-বৈঠা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দেয়াল তৈরী করে রেখেছিল সেদিন আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা বাহিনী শুধু জামায়াতের সভা পান্ড করার জন্যই পৈশাচিক হামলা চালায়নি, তারা জামায়াতকেই নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল জামায়াতের সভামঞ্চে আগুন ধরিয়ে দিতে। তাইতো তারা আশে পাশের ভবনের ছাদে উঠে বোমা ও বিভিন্ন ধানের আগ্নেয়াস্ত্র সহ অবস্থান নেয়। এতকিছুর পরেও যখন জামায়াতের সমাবেশ শান্তিপূর্ন ভাবে শেষ হচ্ছিল সভার শেষ দিকে আমীরে জামায়াতের বক্তব্য শুরু হলে তারা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পুনরায় হামলা চালায়। একদিকে ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষন করতে থাকে অপরদিকে পল্টন মোড় থেকে গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে লগি-বৈঠাধারীরা সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীদের জীবনবাজি রেখে ভুমিকার কারনে তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
সেদিনের পল্টনের পৈশাচিকতায় শহীদ হন ৬ জামায়াত-শিবির কর্মী। আহত হন সহস্রাধিক আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদ। সেদিনের ঘটনায় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আহত হয়েছেন তৎকালিন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মজিবুর রহমান মঞ্জু। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্নক আহত হন তৎকালীন শিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক রেজাউল করিম। এছাড়াও মহানগরী পর্যায়ের অনেক দায়িত্বশীল মারাত্নক আহত হয়েছিলেন। তাদেরকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে মাসের পর মাস। ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের শিবির নেতা আমান প্রায় ২ সপ্তাহ অজ্ঞান থাকার পর আল্লাহর অশেষ কৃপায় সুস্থ হয়ে উঠেন।
আওয়ামী লীগ সেদিনের পৈশাচিকতা হালাকু খান, সীমার ও চেঙ্গিসখান পৈশাচিকতাকেও অনেকাংশে হার মানিয়েছিল। একটি দলে কেউ কেউ হিংস্র হতেই পারে কিন্তু অন্যরা তাদেরকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে, নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে কিন্তু সেদিন সবাই যেন হিংস্র হয়ে গিয়েছে। প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে মানুষ হত্যায় যখন কিছু লোক নেমে পড়ছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবলীলায় এ অমানবিক কাজটি প্রত্যক্ষ করেছিল বাকী সবাই মিলে যেন কারোই কিছু করার নেই।
প্রকাশ্য গুলিতে অনেকের শরীর ঝাঝরা করে দেয়া হয়েছে, লগি-বৈঠা দিয়ে অসংখ্য জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। কারও কারও মাথা ফেটে মগজ পর্যন্ত বেরিয়ে গেছে। নির্মম আঘাতে অনেকের চেহারাও বিকৃত হয়ে গেছে। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে গেলেও হায়েনাদের হৃদয় একটুও গলেনি। বরং জননেত্রী ! কর্মসূচী সফল করায় নেতাকর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হায়রে মানবতা! হায়রে আমাদের মানসিকতা! হায়রে মানুষের জন্য রাজনীতি।
এ অমানবিক ও পৈশাচিকতা দেখে আৎকে উঠেছে বিশ্ববিবেক। বিশ্ববাসী দেখলো কিভাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারনে ক্ষমতার লোভে একটি দল আরেক দলের কর্মীদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করতে পারে। সে ঘটনা আজো স্মৃতিতে আসলে আবাক হয়ে যাই, কি করে সেদিন হাজার হাজার লোকের আক্রমন শত শত জামায়াত-শিবির কর্মীরা প্রতিহত করেছিল।
কিভাবে দীর্ঘসময় মানবঢাল রচনা করে আওয়ামী হায়েনাদের আক্রমন থেকে নেতৃবৃন্দ ও সমাবেশের জন্য তৈরী মঞ্চ রক্ষা করেছিল। একদিকে চলছে প্রতিরোধ অন্যদিকে আসছে একের পর এক শাহাদাতের সংবাদ। এ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। মনে হচ্ছিল এ যেন আর এক কারবালা।
যে আওয়ামী লীগ আজকে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে প্রহসন চালাচ্ছে ২৮ অক্টোবর সেই আওয়ামী লীগই বড় মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করেছে। সেদিন প্রকাশ্যে দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুনদের নৃশংসভাবে হত্যা করে নারকীয় উল্লাস চালিয়েছিল তারা। লগি, বৈঠা, লাঠি, পিস্তল ও বোমা হামলা চালিয়ে যেভাবে সেদিন আওয়ামী ক্যাডাররা মানুষ খুন করেছে তা মনে হলে আজও শিউরে উঠে সভ্য সমাজের মানুষ। সাপের মত পিটিয়ে মানুষ মেরে লাশের উপর নৃত্য করে উল্লাস করার মতো ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না।
২৮ অক্টোবরের সে নারকীয় হত্যযজ্ঞের দিনা শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। যে পুলিশের পক্ষ থেকে ২৮ অক্টোবরের আগ থেকেই বারবার ঘোষনা করা হচ্ছিল লগি-বৈঠা, কাস্তে বা অন্য কোন অস্ত্রশস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ও বে-আইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে পুলিশের উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের আগ্নেয়াস্ত্র ও লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা জামায়তের সমাবেশ স্থলে হামলা চালায়। অসহায় জামায়াত ও শিবিরের নেতা কর্মীদের শত অনুরেধেও পুলিশ কোন ভূমিকা রাখেনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লৎফুজ্জামান বাবরের ভূমিকাও ছিল রহস্যজনক।
ঘটনার পরদিন জামায়াতে ইসলামীর পল্টন থানার তৎকালীন আমীর এ.টি.এম.সিরাজুল হক বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ সহ ১৪ দলের ৪০ জন নেতার নামসহ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামী করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পালাতক আসামী হিসাবে উল্লেখ করে ৪৬ জন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিট দাখিলের পর ২২ এপ্রিল ২০০৭ সালে মামলায় চার্জশিটটি গ্রহন করে আদালত পালতক আসামী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী করে। পরদিন ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার নাটকীয় আবেদনের প্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আদালত নির্দেশ দেন। অবশেষে ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলায়ের সুপারিশে আদালত মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। আইন অনুযায়ী কোন হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ছাড়া প্রত্যাহারের সুযোগ না থাকলেও মহাজোট সরকার তাই করেছে। এটি হল আওয়ামী আইনের শাসনের জীবন্ত নজীর!!
২৮ অক্টোবর সে ভায়াল দিনের কথা মনে পড়লেও আজো নিজের অজান্তেই আতকে উঠি। সেদিন কি নারকীয় ও পৈশাচিক কান্ডইনা আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছিল। ২৮ অক্টোবরের মিশন ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নতুন ভাবে জামায়াত শিবিরকে মোকাবিলা করার উদ্যোগ গ্রহন করে। ফখরুদ্দিন ও মঈনুদ্দিন ২ বছর কেয়ারটেকার সরকারের নামে অবৈধ ভাবে ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে পার্শ্ববতী দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশে একটি মিমাংসিত ইস্যুকে সামনে জাগিয়ে জামায়ত নেতাদের বিচারের জন্য জনমত গঠন করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বচনী মেনিপোস্টোতে তা নিয়ে আসে যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে তারা নতুনভাবে প্রহসনের ট্রাইবুনালের মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে তারা হত্যা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের জামায়াত-শিবির নির্মুলের অভিযান ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর ধারাবাহিকতা মাত্র। তারা এখন আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এবং তাদের দলীয় লোকদের বিচারের আসনে বসিয়ে প্রহসনের বিচার বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলাীর নেতৃবৃন্দকে রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। ইতো মধ্যেই তারা মিরপুরের কসাই কাদেরের জঘন্য কাজের দায়ভার আমাদের প্রিয়নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার উপর চাঁপিয়ে দিয়ে তাকে বিচারের নামে নাটক মঞ্চায়ন করে জুডিসিয়াল কিলিং এর মধ্য দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করেছে। পিরোজপুরের দেলু শিকদারের অপকর্মের দায়ভার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাস্সিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাগারে থাকার ব্যাপারে আদালতের রায় দিয়েছে। বাকী নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে তাদের নাটক মঞ্চায়নও চুড়ান্ত পরিণতির দিকে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দলের কাছে আজকে বিচার বিভাগ অনেকাংশে জিম্মী। ন্যায় বিচারের বানী আজ নিরবে নিভৃতে কাঁদে।
তবে ইতিহাসের গতিধারা কখনও একই রকম থাকেনা। সময়ের স্রোতের সাথে ইতিহাসের গতিধারাও পরিবর্তনশীল। আজকে ক্ষমতার জোরে আওয়ামী লীগ যে অপকর্ম করে যাচ্ছে সময়ের ব্যবধানে সে অপকর্মের দায়ভারও আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। ২৮ অক্টোবরের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য হুকুমের আসামী হিসাবে একসময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিচার হওয়াটাও অবাস্তাব মনে হবেনা। ইতিহাসের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। আওয়ামী লীগকে একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সকল অপকর্মের প্রায়শ্চিত্য ভোগ করতে হবে। তবে আশার দিক হলো যে, ২৮ অক্টোবরে যেভাবে আন্দোলনের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন ও নেতাদেরকে রক্ষায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে সে আন্দোলনের কর্মীরা এখনও সে আন্দোলন ও নেতৃবৃন্দকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ কুরবানীর নজরানা পেশ করে যাচ্ছে। অকাতরে সহ্য করছে পাহাড় সম জুলুম নির্যাতন । গত ৫ বছরে সরকারের মদদপুষ্ট বাহিনী ও তাদের দলীয় ক্যাডারদের হাতে জামায়াত-শিবিরের ২ শাতাধিকের উপর নেতা কর্মী শহীদ হয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ৩০০ শতাধিক আন্দোলনের মুজাহিদ। চোখ হারিয়ে চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছেন অসংখ্য ছাত্র-যুবক। চিরুনী অভিযান, স্টিং অপারেশন, যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে প্রায় অর্ধ লক্ষ জামায়ত-শিবির নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস কারান্তরীন করে রেখেছে। সারাদেশে ৫ লক্ষাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় আসামী বানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে ৩ শতাধিক নেতাকর্মী। জুুলুম-নিপীড়ন এখনো অব্যাহত আছে। এতকিছুর পরও সরকার এ কাফেলার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি। সকল বাধা প্রতিবন্ধকাতে হাসিমুখে বরণ করে এগিয়ে চলছে আল্লাহর দ্বীনের ঝান্ডাবাহনকরী আদর্শের সৈনিকেরা। তারা এগিয়ে চলছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করে একটি সুন্দর সোনালী স্বপ্নীল বাংলাদেশ রুপান্তরিত করবে। সেই সোনালী স্বপ্নীল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ২৮ অক্টোবরের ত্যাগ-কুরবানী হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়।