আতিকুর রহমান
  • মূলপাতা
  • জীবন বৃত্তান্ত
  • লেখালেখি
    • শ্রমিক কল্যাণ
    • অর্থনীতি
    • ইতিহাস
    • ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন
    • বাংলাদেশ
    • রাজনীতি
    • সংস্কৃতি
    • বিবিধ
  • সংবাদ/কার্যক্রম
    • বিবৃতি/বাণী
    • দাওয়াহ কার্যক্রম
    • সমাজ কল্যাণ
    • সংগঠন ও রাজনীতি
    • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
    • স্বাস্থ্যসেবা
    • শ্রমিক কল্যাণ
    • আইন ও মানবাধিকার
    • তথ্য ও গবেষণা
    • সাহিত্য ও সংস্কৃতি
    • পরিবেশ ও কৃষি উন্নয়ন
    • যুব ও ক্রীড়া
    • আন্তর্জাতিক
  • গ্যালারী
    • ফটো গ্যালারী
    • ভিডিও গ্যালারী
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • জীবন বৃত্তান্ত
  • লেখালেখি
    • শ্রমিক কল্যাণ
    • অর্থনীতি
    • ইতিহাস
    • ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন
    • বাংলাদেশ
    • রাজনীতি
    • সংস্কৃতি
    • বিবিধ
  • সংবাদ/কার্যক্রম
    • বিবৃতি/বাণী
    • দাওয়াহ কার্যক্রম
    • সমাজ কল্যাণ
    • সংগঠন ও রাজনীতি
    • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
    • স্বাস্থ্যসেবা
    • শ্রমিক কল্যাণ
    • আইন ও মানবাধিকার
    • তথ্য ও গবেষণা
    • সাহিত্য ও সংস্কৃতি
    • পরিবেশ ও কৃষি উন্নয়ন
    • যুব ও ক্রীড়া
    • আন্তর্জাতিক
  • গ্যালারী
    • ফটো গ্যালারী
    • ভিডিও গ্যালারী
আতিকুর রহমান

ইসলামী সংগঠনে যোগ্য সংগঠকের বৈশিষ্ট্য

আতিকুর রহমান

অক্টোবর ২৪, ২০১৯
ইসলামী সংগঠনে যোগ্য সংগঠকের বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা:
যে কোন সংগঠনের কার্যসম্পাদন বা অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছার জন্য যার ভুমিকাকে প্রদান ধরা হয় তিনি হচ্ছেন উক্ত সংগঠনের পরিচালক বা দায়িত্বশীল।বহু জনপ্রিয় আন্দোলন সঠিক নেতৃত্বের অভাবে যেমন ব্যর্থ হয় তেমনিভাবে যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে অনেক ভ্রান্তমত ও সাময়িকভাবে বিজয় লাভ করতে পারে। একটি গাড়ির যাত্রীদের গন্তব্যস্থল সঠিক স্থানে হবে, না ভুল স্থানে হবে তা যেমন গাড়ির ড্রাইভারের উপর নির্ভর করে,ঠিক তেমনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব বা পরিচালকের উপর নির্ভর করে সংগঠনটির ভবিষ্যত।

ইসলামী সংগঠনে নেতৃত্বের অবস্থান:
ইসলামী আদর্শ বা জীবন ব্যবস্থা নেতৃত্ব কেন্দ্রীক।ইসলামী সংগঠন পরিচালনায় যারা নিয়োজিত থাকেন তারা অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের মতো নয়, তাদের পরিচয় দায়িত্বশীল। আর দায়িত্বশীল হচ্ছেন-

১. নবী ও রাসূলদের উত্তরসূরী-
মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে নবী রাসূলদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) এর পর যেহেতু আর কোন নবী-রাসূল পৃথিবীতে আসবেননা, তাই উম্মতে মুহাম্মদীকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেন- “এখন তোমরাই দুনিয়ার সর্বোত্তম দল।তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংঙ্কার সাধনের জন্য। তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুস্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো” -সুরা আলে ইমরানঃ১১০

২. আল্লাহর প্রতিনিধি-
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে এ পৃথিবীতে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন-আবার সে সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেস্তাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা-প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই”। তারা বললো “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশ্নংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি”। আল্লাহ বলেন, “আমি যা জানি তা তোমরা জানো না” -সূরা বাকারাঃ৩০

একজন রাষ্ট্রপ্রধানের নিযুক্ত কোন প্রতিনিধিকে অন্য রাষ্ট্রে প্রেরণ করলে প্রতিনিধির যেমন শুধুমাত্র তার নিজের রাষ্ট্র প্রধানের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে হয় কিংবা রাষ্ট্রের পলিসির বাহিরে গিয়ে ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকেনা, ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতিনিধিত্ব করার সময় বান্দাকে সর্বদাই লক্ষ্য রাখতে হবে আল্লাহ কি বলেছেন এবং তিনি কি চান। দুনিয়ার রাষ্ট্রদূতের মর্যাদা যদি এত অধিক হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আমাদের মর্যাদাও লক্ষ্য কোটি গুন বেশী।

৩. শরয়ী মর্যাদার অধিকারী-
কর্মীদের নিকট দায়িত্বশীলের মর্যাদা উলিল আমরের পর্যায়ের। আল কোরানে নেতৃত্বকে প্রধান ভূমিকা পালনকারী রুপে স্থান দিয়েছে। মহান আল্লাহর ঘোষনা হচ্ছে-হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকো।এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট। সূরা নিসাঃ৫৯

এখানে উলিল আমর শব্দের অর্থ হলো-এমন দায়িত্বশীল যার নির্দেশ দেওয়ার শরয়ী মর্যাদা রয়েছে।

ইসলামী সংগঠনের যোগ্য সংগঠক:
কারো পক্ষে সংগঠক বনে যাওয়া কঠিন কিছু নয়,কিন্তু যোগ্য সংগঠক হওয়া সত্যিই কঠিন।সংগঠনের কিছু রুটিন ওয়ার্ক সম্পন্ন করা খুবই সহজ, কিন্তু সংগঠনে প্রান-বন্যা সৃষ্টি করা মোটেই সহজ নয়। সংগঠনে প্রান-বন্যা সৃষ্টি করা এবং তা অব্যাহত রাখা একজন যোগ্য সংগঠকের পক্ষেই সম্ভব। ইসলামী আন্দোলন বা সংগঠনে একজন যোগ্য সংগঠকের অবস্থান হচ্ছে-
– যোগ্য সংগঠক হলেন একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি
– যোগ্য সংগঠকের প্রতি কর্মী বাহিনী স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রদ্ধাবনত থাকে
– যোগ্য সংগঠককে কড়া নির্দেশ দিয়ে কর্মীদেরকে কাজে নামানোর প্রয়াস চালাতে হয়না। তাঁর ইঙ্গিত বা অনুরোধই কর্মীদেরকে কর্মচঞ্চল করার জন্য যথেষ্ট।
– একজন যোগ্য সংগঠক বিভিন্নমুখী যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে যোগ্য সংগঠকের স্তরে উন্নীত হন।

ইসলামী আন্দোলন বা সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত সকলেই কোননা কোন পর্যায়ের দায়িত্বশীল বা পরিচালক। যে অবস্থানে থেকে তাকে প্রতিনিয়ত দ্বীনি আন্দোলনের জিম্মাদারী পালন করে যেতে হয়। সকলের দায়িত্বের সাথে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি জড়িত বলে তিনি সংগঠকের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যান। একজন সংগঠককে যোগ্য সংগঠকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য গুলোর অধিকারী হতে হবে-

১. জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন-
একজন যোগ্য সংগঠকের জ্ঞানের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকবে।এক্ষেত্রে
– যে জীবন ব্যবস্থা সে মানব সমাজে কায়েম করতে বদ্ধ পরিকর সে জীবন ব্যবস্থার ব্যাপারে সঠিকভাবে অবগত থাকা।
– আদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠন সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেবার মতো জ্ঞান থাকা
– বিরোধী মতবাদগুলোর বক্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকা এবং বিরুদ্ধবাদীদের প্রশ্নের যুক্তিপুর্ণ ও সন্তোষজনক জবাব জানা
– আধুনিক চিন্তা ও কর্মের ত্রুটিপূর্ণ অংশকে ত্রুটিহীন অংশ থেকে আলাদা করার মতো সমালোচনার যোগ্যতা
– কোরান-হাদীস ও ইসলামী সাহিত্যের জ্ঞানে পারদর্শিতা
– একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা
– সমসাময়িক পরিস্থিতি ও সাধারণ জ্ঞানের উপর কম বেশী দক্ষতা থাকা

২. উন্নত ও পরিচ্ছন্ন আমল-
একজন সংগঠক বা দায়িত্বশীলকে অবশ্যই আদর্শের মূর্তপ্রতীক হতে হবে।তাঁর আমল হতে হবে উন্নত আকর্ষনীয়, জনশক্তিসহ অন্যদের জন্য অনুকরনযোগ্য। তিনি থাকবেন সকলের প্রশ্নের উর্দ্ধে। এক্ষেত্রে বাস্তব জীবনে একজন যোগ্য সংগঠককে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহে অত্যদিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে-
– মৌলিক ইবাদৎসমূহ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
– নিয়তের পরিশুদ্ধতা অর্জন
– মোয়ামেলাত সুন্দর করা।
– ওয়াদা পালন করা
– পর্দার বিধান মেনে চলা
– ব্যবহারিক জীবন সুন্দর-পরিচ্ছন্ন করা
– নৈতিকমান প্রশ্নবিদ্ধ না করা
– লোভহীন ও সহজ সরল জীবন যাপন করা
– নেফাকী মুক্ত জীবনের অধিকারী হওয়া
– ব্যক্তিজীবনে ইসলামের প্রতিচ্ছবি হওয়া
– আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন

৩. কোমলতা ও বিনয় নম্রতা –
ইসলামী সংগঠনের যোগ্য সংগঠক বা দায়িত্বশীলের হৃদয় হবে কোমল,ভাষা হবে মধুর,মেজাজ হবে শীতল।তবে এই প্রীতিপুর্ণ ব্যবহারের অর্থ এই নয় যে,দায়িত্বশীল ব্যক্তি কোন ব্যাপারে কঠোর হবেননা এবং কোন অন্যায় কাজে বাধা দিতে পারবেননা বরং আদর্শ,উদ্দেশ্য ও শৃঙ্খলার খাতিরে দায়িত্বশীলকে কখনো কখনো সহযোগিদের সাথে আদেশের সুরে কথা বলতে হয়,কাজ আদায় করতে হয়।কিন্তু সে আদেশে থাকবে স্নেহ প্রীতির প্রান প্রবাহ।মহান আল্লাহ বলেন-এবং মুমিনদের মধ্য থেকে যারা তোমার অনুসরণ করে তাদের সাথে বিনম্র ব্যবহার করো।সূরা শূয়ারাঃ২১৫

হযরত আয়াজ ইবনে আমর(রাঃ)থেকে বর্নিত আছে তিনি বলেন-একদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ আমার কাছে এসে বলেন-বাপু হে শোন!আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে বলতে শুনেছি-নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি হলো রাগী,বদ মেজাজী ব্যক্তি।খবরদার,আমি তোমাকে সাবধান করছি তুমি যেন তাদের দলভুক্ত না হও।(বুখারী ও মূসলিম)

রাসূল (সাঃ)এর জীবন হচ্ছে আমাদের জন্য কোমলতা ও বিনয় নম্রতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ-
রাসূল (সা)অত্যন্ত উদার,সত্যবাদী ও অতিশয় নম্রস্বভাবের লোক ছিলেন। রাসূল (সাঃ) এমন কোমল স্বভাবের লোক ছিলেন যে, কারো মনে সামান্যতম কষ্ট হতে পারে এমন কোন কথা কখনো বলতেননা। কারো আচার আচরণে বিরক্ত হলেও তা মুখে প্রকাশ করতেননা। মানুষে ভূলভ্রান্তি ক্ষমা করে দিতেন। শত্রুকে হাতের কাছে পেয়েও প্রতিশোধ নিতেননা বরং ক্ষমা করে দিতেন।কোন সাহায্য প্রার্থীকে কোন কিছু না দিয়ে বিদায় দিতেন না। মানুষের মঙ্গল করাই ছিল তাঁর জীবনের সাধণা। রাসূল (সাঃ) এর সহধর্মীনি হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত আনাস (রাঃ), হযরত হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ) প্রমুখ প্রখ্যাত সাহাবীগণ যাঁরা দীর্ঘকাল প্রিয়নবী (সাঃ) এর পবিত্র খেদমতে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তাঁদের সবার সর্বসম্মত বর্ননা হলো এই যে, তিনি অত্যন্ত নম্র স্বভাবের,সুন্দর চরিত্রের, কোমল চিত্রের এবং সৎ প্রকৃতির লোক ছিলেন। তাঁর মুখমন্ডল সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকত।

হযরত মালেক বিন হুয়াইরিশ (রাঃ) বলেছেন- আমরা কতিপয় তরুন যুবক নবী করীম (সাঃ) এর দরবারে থাকার জন্য পৌঁছলাম। আমরা বিশরাত পর্যন্ত তাঁর দরবারে রইলাম।সত্যিই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত নরম,হৃদয়বান ও দয়ালু ছিলেন।

রাসূল (সাঃ) এর একান্ত খাদেম ছিলেন হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)। তার মা তাঁকে বাল্যকালে এনে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর খিদমতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। রাসূল (সাঃ) এর ব্যাপারে হযরত আনাস (রাঃ) এর উক্তি- আমি একটানা দশ বছর হুজুরে পাক (সাঃ) এর খেদমতে কাটিয়েছি, এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে হুজুর (সাঃ) কখনো আমার প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করেননি। কখনও এমন কথা বলেননি যে, অমুক কাজটা কেন করলে কিংবা অমুক কাজটা কেন করলে না? -বুখারী

রাসূল (সাঃ) এর সহধর্মিনী হযরত আয়েশা (রাঃ) কে কতিপয় তরুন তাবেয়ী অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁকে রাসূল (সা) এর জীবনচরিত মূল্যায়ন করতে বললে তিনি মাত্র একটা কথা দ্বারা প্রশ্নকারীদের সকল কৌতুহলের নিবৃত্তি করেছিলেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন- তোমরা কি কুরান শরীফ পাঠ কর না? মহানবী(সা)ছিলেন পবিত্র কোরানেরই বাস্তব নমুনা। অর্থ্যাৎ পবিত্র কুরানকে যদি একজন মানুষরূপে কল্পনা করা যায় তবে তিনি হবেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

মক্কা বিজয়ের সময় এক বুড়ি বোঝা বহন করে মক্কা থেকে পলায়ন করছে দেখে দয়ার সাগর রাসূল (সা) বুড়ির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বুড়ি মা! তুমি কোথায় যাচ্ছ? জবাবে বুড়ি বললো, বাবা তুমি জান না, মুহাম্মদ বিরাট বাহিনী নিয়ে মক্কা ধবংস করার জন্য আসছে। মক্কার লোকেরা পালাচ্ছে, আমিও পালাচ্ছি। এমতাবস্থায় রাসূল (সাঃ) বললেন, বুড়ি মা! বোঝা বহন করতে তোমার খুবই কষ্ট হচ্ছে।তাই বোঝাটি আমার মাথায় দাও, আমি তোমাকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেই। বুড়িতো খুশিতে হতবাক! বুড়ির বোঝা মহানবী (সাঃ) বহন করে বুড়ির পেছনে পেছনে গিয়ে বুড়িকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিলেন। এবার বুড়ি রাসূল (সাঃ) এর পরিচয় পেয়ে অবাক হয়ে গেল। বুড়ি বলল,হুজুর! আপনার সম্পর্কে আমাদেরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। আপনার মতো পরোপকারী লোক আল্লাহর জমিনে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। রাসূল (সাঃ)কোমল ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বুড়ি মুসলমান হয়ে গেলেন।

একবার প্রিয় নবী (সাঃ) চাদর বন্টন করছিলেন এই সংবাদ শুনে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত মাখরামা (রাঃ) তদীয় পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর মহান দরবারে হাজির হলেন। রাসূল (সাঃ)তখন চাদর বন্টনের কাজ শেষ করে বাড়ির ভেতরে চলে গিয়েছিলেন। হযরত মাখরামা (রাঃ) পুত্রকে বললেন, হুজুর পাক (সাঃ) কে ডাক দাও। তিনি ডাকে সাড়া দেবেন। পুত্র বলল,আমরা সাহায্যপ্রার্থী, বিশ্বনবী (সাঃ) কে ডেকে বাড়ির বাহিরে আনার মতো লোক কি আমরা? হযরত মাখরামা পুত্রকে বললেন, বৎস! তুমি হুজুর পাক (সাঃ) এর করুনার কথা জান না, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও কোমল স্বভাবের লোক, পরাক্রম প্রদর্শনকারী লোক তিনি নন।পিতার কথায় পুত্র সাহস করে ডাক দিল। ডাক শোনার সঙ্গে সঙ্গেই দয়ার সাগর রাসূল (সাঃ) ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন এবং পিতাপুত্রকে রেশমের কাজ করা আ’বা দিয়ে বিদায় করলেন।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন,দায়িত্বশীলের জন্য চারটি গুন অপরিহার্য।
১. কোমলতা তবে দুর্বলতা নয় ২.দৃঢ়তা তবে কঠোরতা নয় ৩.স্বল্প ব্যয়িতা তবে কৃপনতা নয় ৪. দানশীলতা তবে অপব্যয় নয়

৪. অগ্রনী ভুমিকা পালনকারী-
সাংগঠনিক কাজে অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের ক্ষেত্রে সংগঠকের অগ্রনী ভূমিকা থাকবে। এসব বিষয় নিয়ে তিনিই বেশী বেশী ভাববেন।তিনিই নতুন নতুন চিন্তা সংগঠনে পেশ করবেন, নতুন নতুন কর্মকৌশল উদ্ভাবন করবেন। মোটকথা চিন্তা ও কাজ উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা হবে অগ্রনী।

৫. ইকামতে দ্বীনের দায়িত্বকে অন্যসব দায়িত্বের উপর প্রাধান্য দেয়া-
একজন সংগঠকের মূল দায়িত্বই যেহেতু দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা এবং দ্বীনের পথে লোকদেরকে সম্পৃক্ত করার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সেহেতু সংগঠককে অন্যসব দায়িত্বের চেয়ে ইকামতে দ্বীনের দায়িত্বকে বেশী প্রাধান্য দিতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন- “বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা,তোমাদের সন্তান,তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর এগুলো যদি আল্লাহ, রাসূল সাঃ ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় না হয়,তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত,আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেননা। সূরা তাওবাঃ২৪

৬. পরামর্শ ভিত্তিক সংগঠন পরিচালনা-
একজন যোগ্য সংগঠক মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে অধঃস্থনদের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করবেন। জনশক্তির মুখ বন্ধ করে তাদের হাত-পা বেঁধে তাদেরকে অন্ধকারে রেখে সামষ্টিক ব্যাপারসমূহ পরিচালনা করা বড়ো ধরণের জুলুম।কেননা পরামর্শ ইসলামী জীবন প্রনালীর একটি গুরুত্বপূর্ন স্তম্ভ। পরামর্শ ছাড়া সামষ্টিক কাজ পরিচালনা করা শুধু জাহেলী পন্থাই নয়, আল্লাহর নির্ধারিত বিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। সূরা আলে ইমরানের ১৫৯নং আয়াতে এ ব্যাপারে আদেশ করা হয়েছে এবং সূরা আশ-শুরা এ বিষয়টিকে ঈমানদারদের সর্বোত্তম গুনাবলীরর মধ্যে গন্য করা হয়েছে।আল্লাহ বলেন-যারা তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলে, নামাজ কায়েম করে এবং নিজেদের সব কাজ পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়, আমি তাদেরকে যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। সুরা আশ-শুরাঃ৩৮

৭.উন্নত মানবীয় গুনাবলীর অধিকারী-
একজন যোগ্য সংগঠককে নিম্নোক্ত গুনাবলী গুলোর অধিকারী হওয়া জরুরী।
– কঠোর পরিশ্রম প্রিয়তা
– কষ্ট সহিষ্ণুতা।খেজুর পাতা প্রচন্ড রোদ্রেও নুয়ে পড়েনা।যোগ্য সংগঠককে খেজুর পাতার ন্যায় হতে হবে।
– সাহসিকতা।কঠিন সময়ে নেতা ও কর্মীর পরীক্ষা হয়ে যায়।
– ব্যক্তি ও বস্তু নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন
– দূরদর্শিতা ও সুক্ষদর্শিতা
– বিচক্ষনতা
– উদার ও স্থির চিত্ততা
– সময়ানুবর্তিতা
– জরুরী পরিস্থিতিতে তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা
– সমযোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহনে পারদর্শী
– আন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা
– মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার যোগ্যতা

৮. ত্যাগের মহীমায় উজ্জীবিত-
ইসলামী সমাজে নেতৃত্বকেই ত্যাগ ও কুরবানীর উদাহরণ পেশ করতে হয় সর্বাগ্নে।এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ)ই হচ্ছেন আমাদের নিকট শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। রাসূল (সাঃ) ছিলেন অল্পে তুষ্ট মানুষ।মদীনার রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাপড় কখনো পাট করে রাখা হতোনা। অর্থ্যাৎ তাঁর অতিরিক্ত কাপড় ছিলো না যা পাট করে রাখা যেতো। রাসূল (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর আয়িশা (রাঃ) বলেন যে, রাসূল্লুল্লাহ (সাঃ) এই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, কিন্তু কখনো দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারেননি।
– ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নিজে না খেয়ে কর্মীকে আগে খাওয়ানো বা নিজের খাবার থেকে কর্মীদের খাওয়ানোতে আরো বেশী অভ্যস্ত হওয়া উচিৎ।

৯. সাংগঠনিক শৃঙ্খলা সংরক্ষণে আপোষহীনতা-
একজন সংগঠক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও পরিবেশ রক্ষায় সর্বদায় তৎপর থাকবেন।যাছাই বাছাই করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ কারীর ব্যাপারে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। সর্বস্তরে আনুগত্যের পরিবেশ তৈরি করা এবং আনুগত্যের ব্যাপারে অনমনীয় থাকবেন । আঞ্চলিকতা ও বক্র চিন্তা পরিহার করে সংগঠন পরিচালনা করবেন।সংগঠনের অভ্যন্তরে জান্নাতী পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সক্রিয় থাকবেন।

১০. কুন্ঠাহীন জবাবদিহি-
কোন সংগঠনের সংগঠক নিরঙ্কুশ স্বাধীন কোন ব্যক্তিত্ব নন।যারা তাকে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করেছে তিনি তাদের প্রশ্নের জবাব দান এবং তাঁর দায়িত্ব পালন ও অর্থ সম্পদ ব্যয়-ব্যবহার সম্পর্কে তাঁদের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য।একজন যোগ্য সংগঠক কুন্ঠাহীনভাবেই এই জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত থাকেন।

১১. প্রেরণা দায়ক বক্তৃতা ভাষণ-
যোগ্য সংগঠকের বক্তৃতায় পারদর্শীতা থাকা জরুরী। কেননা কোন কোন ক্ষেত্রে বক্তৃতা জাদুর মতো কাজ করে।অনেকগুলো গুরুত্বপুর্ণ কথাও সংক্ষেপে সুন্দর করে বক্তৃতার মাধ্যমে উপস্থাপন করা সম্ভব।বক্তৃতার ভাষা হতে হবে সহজবোধ্য, পয়েন্ট ভিত্তিকক, যুক্তিভিত্তিক ও তথ্য-ভিত্তিক।এতে থাকবে বলিষ্ঠতা ও জনশক্তিদের উদ্দীপ্ত করার ক্ষমতা। তবে রাতারাতি কারো পক্ষে সুবক্তা বা বাগ্মীতা অর্জন করা সম্ভব নয়। সাধনা ও অধ্যবসায়ের ফলে ধীরে ধীরে এগুন অর্জিত হতে পারে। হার্ডম্যান বার্ড ইংল্যান্ডের একজন পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথমতঃ সংসদে কথা বলতে পারতেননা এমনকি একটি বাক্যও শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে প্র্যাক্টিস করে তিনি ইংল্যান্ডের সংসদে ২ থেকে ২.৩০ ঘন্টা বক্তব্য রেখেছেন।

১২. আমানতের সংরক্ষণ-
একজন সংগঠক আমানতদারিতা ও আমানতের সংরক্ষনের ব্যপারে সতর্ক ভুমিকা পালন করেন।আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন থাকা এবং আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা একজন যোগ্য সংগঠকের অন্যতম দায়িত্ব।

১৩. ইসলামী সংগঠনের মূল নীতিমালা সংরক্ষণ-
একজন যোগ্য সংগঠক ইসলামী সংগঠনের মৌলিক নীতিমালা সংরক্ষনে সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকেন।
– সকল পরস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা পোষন করা
– সকল কাজে রাসূল (সা) কে স্ট্যান্ডার্ড ধরা
– সাহাবীদের দৃষ্টান্ত সামনে আনা
– ভোগের নয় ত্যাগের পরিবেশ বজায় রাখা
– দারিদ্রকে স্বাভাবিকভাবে সামনে আনা
– ইহতিসাবের পরিবেশ সৃষ্টি করা

১৪. নিস্ক্রিয়তার প্রতিকার-
একজন যোগ্য সংগঠক জনশক্তির নিস্ক্রিয়তা দূরীকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকেন। কোন কারণে জনশক্তির মনে খটকা সৃষ্টি হওয়া,কারো আচরণে রুষ্ট হওয়া, কোন প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হওয়া,পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ভীত হওয়া, কোন আবাঞ্চিত ঘটনায় ব্যাথিত হওয়া,নিজের জীবনে কোন অপরাধ ঘটে যাওয়া, ব্যক্তিগত জীবনে কোন বড় রকমের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া এই ধরণের কোন কারনে একজন কর্মী নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায়
-তার সাথে দেখা ও আলাপ করে নিস্ক্রিয়তার আসল কারণটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করা।
– আল কোরান ও আল হাদীসের আলোকে বক্তব্য রেখে তাকে পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা
-বেশী বেশী সাহচর্য দান করা।

১৫. সর্বপর্যায়ে গতিশীলতা সৃষ্টি-
সংগঠনে গতিশীলতা আনয়নে একজন যোগ্য সংগঠক নিম্নোক্ত ভূমিকা পালন করে থাকেন।
– সর্বপর্যায়ে টিম স্প্রিড সৃষ্টি
– পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি
– শাহাদাতের জযবা
– অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া
– যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া
– সর্বপর্যায়ে আন্তরিকতা পূর্ণ পরিবেশ
– জনশক্তির মাঝে ইনসাফ কায়েম
– প্রেরণা দায়ক আলাপ
– ইতিবাচক কথা,নেতিবাচক নয়

১৬. যোগ্য উত্তরসুরী সৃষ্টি-
যোগ্য সংগঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি যোগ্য উত্তরসূরী তৈরিতে ভুমিকা রাখেন। কোন সংগঠকই অমর নন। তাঁর স্থানান্তরিত হওয়া অথবা ইন্তিকালের পর যদি শূন্যস্থান পুর্ন করার মতো যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া না যায় তা সংগঠনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে। বিশ্বনবী (সাঃ) এ ক্ষেত্রে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন। তিনি নেতৃত্ব দেবার মতো যোগ্য বেশ কয়েকজন ব্যক্তি গড়ে তুলেছিলেন যারা তার ইন্তিকালের পর একের পর এক সফলভাবে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।

১৭. ইসলামী আন্দোলনের অনিবার্য বাস্তবতা হিসেবে জুলুম-নিপীড়ন কে গ্রহণ করা-

একজন যোগ্য সংগঠক ইসলামী আন্দোলনের স্বাভাবিক বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক অভিহিত থাকবেন। যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে খোদাদ্রোহী ও বাতিল শক্তি দ্বারা যে জেল, জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন বা হচ্ছেন, বর্তমান সময়ের জেল, জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়ন পূর্ববর্তী নির্যাতনেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। পৃথিবীর শুরু থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত যেখানেই তাওহীদ বা সত্যিকারের কালেমার দাওয়াত উপস্থাপিত হয়েছে সেখানেই সে আন্দোলনের কর্মীদের বাতিলের রোষাণলে পড়তে হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) সহ অসংখ্য নবী, রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, মুজাদ্দিদ, মুজতাহিদ, ঈমাম, মুজাহিদ, দ্বীনের দাঈসহ দেশে দেশে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অসংখ্য ইসলাম প্রিয় মানুষ আল্লাহর দ্বীনের জন্য অকাতরে নির্যাতন সহ্য করেছেন। জালিমের পাহাড়সম জুলুম-নিপীড়ন ও রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার প্রত্যাশায় সত্য ও ন্যায়ের পথে তারা অটল-অবিচল ছিলেন। জীবনের বড় একটি অধ্যায় তাদের পার হয়েছে ভীতিকর অবস্থা, আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি, জীবনের হুমকি, মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচারে সম্মুখীন হওয়ার মধ্য দিয়ে।শুধুমাত্র আদর্শগত বিরোধের কারনেই তাদেরকে জালিমের জুলুম ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

একজন সংগঠক বা দায়িত্বশীলের এ উপলব্দি থাকতে হবে যে, আল্লাহ তার বান্দাহদেরকে জুলুম-নিপীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেন, কে ঈমানের দাবীতে কতটুকু খাঁটি আর কে কপট। যেমন ওহুদ যুদ্ধের কপট বিশ্বাসীরা ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে পারেনি। বদরের বিজয়ের পর কারা সুবিধাভোগী মুনাফিক তা ওহুদের মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে। জয়ের পর পরাজয়, সুখের পর দুঃখ, আরাম-আয়েশের পর কষ্ট, সম্মানের পর অসম্মানে পতিত করেই সত্যনিষ্ঠ মানুষদের সঠিক অবস্থান বাস্তবে নির্ণয় করা যায়। কেননা সুবিধাবাদী বা সুবিধাভোগী মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিগন সবসময় ভালো বা জয়জয়কার অবস্থায় সামনের কাতারে থাকতে চায়। কিন্তু খারাপ সময়, দুঃখ বা বিপদ আসলে তারা নিজেদেরকে আগের চেয়ে গুটিয়ে নেয় কিংবা ভিতর থেকে শুধু অপরের দোষ চর্চায় লিপ্ত হয় কিংবা গোপনে বিরোধী শক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলে নিজেদেরকে বিপদমুক্ত রাখার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে। ইসলামী আন্দোলনের একজন দায়িত্বশীলের কাছে যেহেতু দুনিয়ার সফলতা চাইতে আখেরাতের সফলতাই চুড়ান্ত সফলতা রুপে বিবেচিত সেহেতু দুনিয়ার সাময়িক সময়ের দুঃখ কষ্ট, বিপদাপদ ও জুলুম নিপীড়নকে সে পরোয়া করার কথা নয়।

ইসলামী আন্দোলনের একজন সংগঠক বা দায়িত্বশীলকে মনে রাখতে হবে রাতের আধাঁর যত গভীর হয় ভোরের সূর্য উঠার সময় তত ঘনিয়ে আসে। নদীতে কখনও জোয়ার আসে আবার কখনও ভাঁটা আসে। সব সময় বাতাস একদিকে প্রবাহিত হয়না বা বাতাসের গতি সব সময় সমান থাকেনা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সব সময় তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিপদে রেখেই খুশি হন বিষয়টা এমন নয়। তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের আরও বেশি প্রিয়পাত্র বানাবার জন্য পরীক্ষা করেন। এক্ষেত্রে কাউকে একটু বেশি পরীক্ষা করেন আর কাউকে একটু কম করেন। এমতাবস্থায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তাঁর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন-হে রাসূল! ওদেরকে বলুন, আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া কখনো কোন (ভালো বা মন্দ) কিছুই আমাদের কাছে পৌঁছে না।তিনিই আমাদের মনিব। মুমিনদেরকে আল্লাহরই উপর ভরসা করা উচিৎ”। সূরা তওবাহঃ৫১

বিপদাপদ ও জুলুম নিপীড়নে ঘাবড়ে না গিয়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, যে নিয়ামতই তোমরা পেয়েছ, তা আল্লাহর পথ থেকেই এসেছে। তারপর যখন তোমাদের উপর কোন কঠিন সময় আসে তখন তোমরা ফরিয়াদ নিয়ে তাঁরই দিকে দৌড়াও”। সূরা নাহল:৫৩

যোগ্য সংগঠকের আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরী-
১. ডিক্টেড তথা নির্দেশ দেয়ার মানসিকতা পরিহার করা
২. সর্বপর্যায়ে চিন্তার ঐক্য গড়ে তোলা
৩. জনশক্তির উপর দোষ না চাপানো
৪. মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করা বা বদ মেজাজ পরিহার করা
৫. অপরের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া।বড় ধরনের ক্ষতি না হলে অন্যের মত গ্রহন করে উৎসাহ দেয়া।
৬. অতিরিক্ত গাম্ভির্যতা পরিহার করা
৭. সিরিয়াসলি কন্ট্রোল এর মানসিকতা পরিহার করা
৮. নিজের যোগ্যতার সকল কিছু উজাড় করে দেওয়া।
৯. স্বৈরাচারী মানসিকতা পরিহার করা
১০. অন্যকে তার যথাযথ মর্যাদা দেয়া
১১. স্বজনপ্রীতি পরিহার করা
১২. সমালোচনা হজমের যোগ্যতা ও সমালোচকদের কদর করা
১৩. জনশক্তির অনুপ্রেরনার উৎসস্থল হওয়া
১৪. আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা

মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে যথাযথ যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দ্বীনি আন্দোলনের জিম্মাদারী সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন।

Share441TweetSharePinSend

সর্বশেষ সংযোজন

শ্রমিক নেতৃত্ব: কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য (১ম পর্ব)

শ্রমিক নেতৃত্ব: কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য (১ম পর্ব)

এপ্রিল ১, ২০২৩

যেকোন আন্দোলন ও সংগঠনে নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা নেত্বত্বকে কেন্দ্র করেই বা নেত্বত্বের গুণাবলিই কর্মীবাহিনীর উপর আবর্তিত হয়। নেত্বত্ব হচ্ছে...

শ্রমিক সংগঠনে ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্ব ও করণীয়

শ্রমিক সংগঠনে ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্ব ও করণীয়

নভেম্বর ১১, ২০২২

শ্রমিক সংগঠন কি? ১.শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে যে সংগঠন কাজ করে তাকেই শ্রমিক সংগঠন বলা হয়। ২.শ্রমিক সংগঠন বলতে মূলত...

অধীনস্থদের সাথে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অনুপম আচরণ

অধীনস্থদের সাথে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অনুপম আচরণ

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২

বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল মানুষকে সমান আর্থিক সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করেননি। কাউকে সম্পদশালী বানিয়েছেন আবার কাউকে করেছেন...

গার্মেন্টস সেক্টরের গুরুত্ব ও আমাদের করনীয়

গার্মেন্টস সেক্টরের গুরুত্ব ও আমাদের করনীয়

আগস্ট ৩, ২০২২

বাংলাদেশে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাাপিত হয় ১৯৬০ সালে ঢাকার উর্দু রোডে। তবে ১৯৭০ সালের পরেই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের পুরোপুরি বিকাশ...

ইউনিট সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ইউনিট সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

জুলাই ২৪, ২০২২

ইউনিটের পরিচয় √ ইউনিট হচ্ছে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অংশ বা সর্বশেষ স্তর। √ লোক সংগ্রহ ও কর্মী সৃষ্টির...

© 2019, Atiqur Rahman

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • জীবন বৃত্তান্ত
  • লেখালেখি
    • শ্রমিক কল্যাণ
    • অর্থনীতি
    • ইতিহাস
    • ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন
    • বাংলাদেশ
    • রাজনীতি
    • সংস্কৃতি
    • বিবিধ
  • সংবাদ/কার্যক্রম
    • বিবৃতি/বাণী
    • দাওয়াহ কার্যক্রম
    • সমাজ কল্যাণ
    • সংগঠন ও রাজনীতি
    • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
    • স্বাস্থ্যসেবা
    • শ্রমিক কল্যাণ
    • আইন ও মানবাধিকার
    • তথ্য ও গবেষণা
    • সাহিত্য ও সংস্কৃতি
    • পরিবেশ ও কৃষি উন্নয়ন
    • যুব ও ক্রীড়া
    • আন্তর্জাতিক
  • গ্যালারী
    • ফটো গ্যালারী
    • ভিডিও গ্যালারী

© 2019 Atiqur Rahman