বাংলাদেশে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাাপিত হয় ১৯৬০ সালে ঢাকার উর্দু রোডে। তবে ১৯৭০ সালের পরেই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের পুরোপুরি বিকাশ ঘটে বলে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। গার্মেন্টেস প্রস্তুতকারক ও গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ হিসেবে ১৯৮১-৮২ সালে ০.১ বিলিয়ন টাকার রেডিমেইড গার্মেন্টস রফতানি করে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পদচারণা আরম্ভ হয়।যদিও সে সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গার্মেন্টেস শিল্পের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। এর মাত্র ১০ বছর পর ১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির পরিমাণ ১৪৪৫ মিলিয়ন ইউ.এস ডলারে উন্নীত হয়। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশের পোশাক একটি ব্র্যান্ড হিসেবে উন্নত দেশগুলোতে পরিচিতি লাভ করেছে। পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান দখল করে প্রমাণ করেছে এদেশে পোশাকশিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এখন পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি দেশে “মেইড ইন বাংলাদেশ” এর পোশাক রফতানি হচ্ছে। দেশের প্রায় ৮০% রেমিটেন্স আসে পোশাক শিল্প খাত থেকে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় আগুনে ১১৭ জন শ্রমিক নিহত হওয়া এবং ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজার ভবন ধসে ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত ও দুই হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হওয়ায় মর্মান্তিক ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপত্তা, জীবনমান নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় উঠে। শুধুমাত্র গার্মেন্টস সেক্টরেই একের পর এক ভবন ধস, আগুন, পদপিষ্ট হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, মালিকপক্ষ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের দুঃশাসন, ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতা, আইন লঙ্ঘনের সংস্কৃতি দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যার ফলে তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে সরকার ও তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শ্রম অধিকারের উন্নতি করতে আহ্বান জানায়।
২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র জেনারালাইসড সিস্টেম অফ প্রিফারেন্স (জিএসপি)-এর অধীনে বাংলাদেশকে দেয়া বাণিজ্যিক সুবিধা স্থাগিত করে।এ সুবিধা ফেরত পেতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কারখানার তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় উন্নতি করা এবং একই সাথে যেসব কারখানা শ্রম অধিকার, অগ্নিকাণ্ড ও ভবন নির্মাণে মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে তাদের জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোসহ আমদানি-রফতানি লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা করতে শর্ত আরোপ করে থাকে। বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে অধিকাংশ শর্ত পূরণ করার কথা বলা হলেও এখনো যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এমতাবস্থায় সরকারকে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার জন্য শর্ত মোতাবেক চলমান কাজগুলো আরও গতিশীল করার পাশাপাশি নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরি
১. শ্রমিকের কর্মস্থালের নিরাপত্তা, চাকরির নিরাপত্তা, মজুরি, দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ইত্যাদি দেশের শ্রম আইনের সঙ্গে জড়িত বিধায় সরকারকে সর্বপর্যায়ে শ্রম আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাগুলো সংশোধন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
২.ফ্যাক্টরীগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং ইউনিয়ন বিরোধী কাজে জড়িত অভিযুক্ত কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা এবং দোষী সাব্যস্ত হলে বিচারের মুখোমুখি করা।
৩. কারখানায়/ফ্যাক্টরীতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার খবর পাওয়া মাত্র মালিক কর্তৃক শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা, মালিক পক্ষের লালন করা গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেফতার করা, এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা, গুম করে দেওয়া, অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের মারধর, হুমকি ও অপদস্ত করার সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখা ও দায়িদের বিচারের ব্যবস্থা করা।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর উচিত কারখানাগুলোতে স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সমর্থন করা এবং তথাকথিত নাম সর্বস্ব বা ভুয়া ইউনিয়ন গঠনকে নিরুৎসাহিত করা। ইউনিয়ন বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখা। স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং উন্নত শ্রম সম্পর্কের সুবিধার ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা।
অন্যদিকে কাপড়ের ব্যান্ড গুলোর উচিত বাংলাদেশের কারখানাগুলোকে শ্রম অধিকার রক্ষায় উৎসাহ দেওয়া এবং কারখানা পরিদর্শনের উন্নতিকরণ এবং কারখানাগুলো কোড অব কন্ডাক্ট এবং বাংলাদেশের শ্রম আইন কতোটা মানা হচ্ছে পরিদর্শনে সে বিষয়ক প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা। কারখানা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে অগ্নি নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইনসিদ্ধ চুক্তিতে বাংলাদেশকে যুক্ত করা।
গার্মেন্টস সেক্টরের গুরুত্ব ও আমাদের করনীয়
৭০ এর দশকে ছোট পরিসরে বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরের যাত্রা শুরু হলেও সময়ের পালাবদলে গত চার দশকে তা বিশাল শ্রম সেক্টরে রুপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট বড় মিলে প্রায় বিশ হাজারের বেশি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে। যাতে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কর্মরত। এ ৫০ লাখ শ্রমিকের সাথে তাদের পরিবার মিলে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ এ শ্রম সেক্টরের সাথে জড়িত।এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই হচ্ছে প্রায় ৮০% । বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে নামে বেনামে যে ৫০ টি পেশা ভিত্তিক শ্রমিক ফেডারেশন কাজ করছে তার বেশীর ভাগই বাম ধারার। তারা শ্রমিক অধিকার এবং শ্রমিকের মুক্তির কথা বলে সুকৌশলে এ বিশাল সংখ্যক নারীদেরকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের মাঝে ইসলাম বিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরি করছে। নারী অধিকারের কথা বলে তাদেরকে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে নামাচ্ছে। অপরদিকে কর্মস্থলে নারীদের জন্য আলাদা কোনো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখার কারণে যৌন নির্যাতন বেড়েই চলছে এবং শ্রমিকরা অহরহ লাঞ্চিত হচ্ছে। ফলে গার্মেন্টস সেক্টরে কর্মরত নারী শ্রমিকরা একদিকে নির্যাতিত,নিস্পেষিত হচ্ছে অপরদিকে তারা ইসলামী অনুশাসনকে জানা ও মানার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় এ দেশের ধর্মপ্রিয় নারী সমাজ কোন পথে ধাবিত হচ্ছে তা ঠিকভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। আমরা যারা একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করছি এ বিশাল শ্রমিক জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে কিংবা তাদেরকে ইসলামী আদর্শের অনুসারী হিসেবে গঠন করতে না পারলে আমাদের সে প্রচেষ্টা কতটুকু সফলতার মুখ দেখবে তা বিবেচনায় আনতে হবে।
গার্মেন্টস সেক্টরের মত এ বিশাল শ্রম সেক্টরে প্রতিনিধিত্ব করার মত শ্রমিক কল্যাণের কোন জাতীয় ফেডারেশন নেই। এ সেক্টরে প্রতিনিধিত্ব করার মত উল্লেখযোগ্য কোন নেতৃত্ব নেই বললেই চলে। অথচ এ সেক্টরের গুরুত্ব জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আইএলও সহ পৃথিবীর বিভিন্ন বড়ো বড়ো শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্টস সেক্টরের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সম্মেলন ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। এ সেক্টরের সাথে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশের স্বার্থ জড়িত। ফলে এ সেক্টর নিয়ে তারা সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকার চেষ্টা করে থাকে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের বড়ো অংশ এ সেক্টর থেকে আসার কারণে সরকারও সবসময় এ সেক্টরের প্রতি নজর রাখতে বাধ্য হয়। গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য গঠন করা হয়েছে পুলিশের বিশেষ ইউনিট ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ’। যাতে কোন কারণে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি না হয় কিংবা শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হলে তা তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়।
বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে সারাদেশে শ্রমিক কল্যাণের ১৬ টির মত ইউনিয়ন আছে। যা মোট শ্রমিকের তুলনায় যতসামান্যই বলা যায়। ফলে সৎ নেতৃত্বের অভাব এবং অসৎ ও ন্যায়ভ্রষ্ট নেতাদের অর্থলোভ ও শোষনের শিকার হয়ে এ সেক্টরের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আজ দিশেহারা। শ্রমিকের অধিকারের কথা বলে তথাকথিত শ্রমিক নেতারা আজ শ্রমিকদের রক্ত চুষে খাচ্ছে। ফলে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এমতাবস্থায় এ সেক্টরে দ্রুত কাজ সৃষ্টির জন্য আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দেশের যে সকল অঞ্চলে এ শিল্প গড়ে উঠেছে সে সকল অঞ্চল গুলোকে চিহ্নিত করে পরিকল্পিত কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানত দেশের নিম্নোক্ত অঞ্চল সমূহে এ শিল্প বেশি পরিমাণ গড়ে উঠেছে। যেমন : ঢাকা মহানগর, ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ,নরসিংদী, বৃহত্তর চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহের ত্রিশাল-ভালুকা, কুমিল্লা, শেরপুর,হবিগঞ্জ,পাবনার ইশ্বরদী, টাঙ্গাইল, নীলফামারী ও খুলনা। এ সকল অঞ্চলে কাজ সৃষ্টি ও কাজকে গতিশীল করার লক্ষে নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।
১. গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক অধ্যুষিত মহানগর,জেলায়,উপজেলায়,থানায় শক্তিশালী কমিটি গঠন করা।
২. গার্মেন্টস সেক্টরে নতুনভাবে গঠিত ফেডারেশনের কার্যক্রম জোরদার করা।
৩. গামেন্টস শ্রমিকদের মাঝে ইসলামী আদর্শের দাওয়াত পৌঁছানোর লক্ষে ব্যক্তিগতভাবে টার্গেটভিত্তিক দাওয়াতি কাজ করা এবং সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে তৌহিদ ও শিরক, সুন্নত ও বিদআতসহ আদর্শের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরা।
৪. গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিদ্যমান সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে এ সেক্টরে দায়িত্বপালনকারী নেতৃবৃন্দকে শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন : ধারা ১০০ অনুযায়ী কর্মঘণ্টা না মানা, ধারা ১০৮ অনুযায়ী অধিককাল ভাতা বা ওভারটাইম না দেয়া,মিড লেভেল ম্যানেজমেণ্টের অমানবিক আচরণ,অল্প লোক দিয়ে বেশী কাজ করানো,কথায় কথায় চাকরীচ্যুতি,ছুটি না দেয়া,অসুস্থ্যাতায় চিকিৎসা ও ছুটি না দেওয়া, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা না দিয়ে চাকরিচ্যুত করা, সম কাজের সমমজুরি না দেওয়া, কর্মচারীদের অতিরিক্ত মজুরি না দিয়ে ‘স্টাফ বলে’ ৮ কর্ম ঘণ্টার স্থালে ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করানোর প্রবণতা।
৫. প্রভাবশালী গার্মেন্টস শ্রমিক, শ্রমিক নেতা ও গার্মেন্টস মালিকদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষে নিম্নোক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা-
ক. ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত খাওয়ানো, খাওয়া ও সামষ্টিক ভোজের আয়োজন করা
খ. গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে কুরআন,হাদিস,আদর্শ শ্রমনীতি বিষয়ক প্রকাশনা সামগ্রী বিতরণ ও বিভিন্ন উপলক্ষে হাদিয়া আদান-প্রদান করা।
গ. বিপদে-আপদে প্রয়োজনীয় সার্ভিস প্রদান করা।
ঘ. তাদের পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করা।
৬. ভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন ও সংস্থাার নেতৃবৃন্দের সাথে পরিচিত হওয়া ও সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া।
৭. গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপকভাবে দাওয়াতী ইউনিট গঠন করা এবং ফ্যাক্টরী ও ইউনিট ভিত্তিক নিয়মিত ও ফলপ্রসু দাওয়াতী কাজ করা।
৮. গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বড় অংশ নারী হওয়ায় তাদেরকে আন্দোলনের দাওয়াতী বলয়ে নিয়ে আসার নিমিত্তে শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় মহিলা দাওয়াতি ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া।
৯. গার্মেন্টস শ্রমিকগণ এলাকায় পরিকল্পিতভাবে সমাজ সেবা কার্যক্রম তথা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যা সেবা,আত্মকর্মসংস্থাান,দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির কার্যক্রম, শ্রম উন্নয়নমূলক নানাবিধ কর্মকান্ড ও প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাওয়াত সস্প্রসারনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১০. গার্মেন্টস শ্রমিকঘন থানা/ওয়ার্ড/ইউনিয়নে সংগঠন কায়েমের চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে ফ্যাক্টরী ভিত্তিক কমিটি ও ইউনিট গঠনের প্রচেষ্টা জোরদার করা ।
১১. গার্মেন্টস শ্রমিকদের মানউন্নয়ন, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব দানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বসবাসকারী এলাকা সমূহের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক মেস গড়ে তোলা এবং শ্রমিক মেস সমূহে সাধারণ শ্রমিকদের নিয়ে কুরআন তালিম, দারসুল কুরআন, হাদিস পাঠ, সহীহ শুদ্ধভাবে নামাজ শিক্ষা ও মাসলা-মাসায়েলের প্রোগ্রাম করা।
১২. শ্রমিক অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহে লেবার কোর্টে শ্রমিকদের মামলা পরিচালনা ও আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য “আইনী সহায়তা সেল” ও শ্রমিকদের বিপদে-আপদে সহযোগিতা করার জন্য “শ্রমিক সেবা ফান্ড” গঠন করা।
১৩. শ্রমিক সেবামূলক কাজের অংশ হিসাবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে ইফতার সামগ্রী,ঈদ উপহার, শীতবস্ত্র বিতরণ,কুরবানির গোশত বিতরণ,শ্রমিকদের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ানো, শ্রমিকদের সন্তানদের পড়ালেখায় সহযোগিতা ও অসহায় শ্রমিকদের কর্জে হাসানা দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা।
১৪. গার্মেন্টস শ্রমিকদের সমর্থন ও আস্থা অর্জনের লক্ষে শ্রমিকদের স্বার্থ ও মৌলিক চাহিদা এবং শ্রম অধিকার ইস্যুতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করা।
১৫. শ্রমিক স্বার্থমূলক ইস্যুতে শ্রমিকদেরকে সম্পৃক্ত করে দাবি আদায়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করা। শ্রমিক আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অনুসরণ করা এবং নৈতিক সীমালঙ্ঘনের পর্যায় পড়ে এমন কর্মকাণ্ড পরিহার করা।
১৬. শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সমমনা শ্রমিক সংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধ/যুগপথ ভূমিকা পালন করা।
১৭. গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন ইস্যুতে সভা, সম্মেলন ও সেমিনারের আয়োজন করা।
১৮. ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম বৃদ্ধি ও জোরদার করা।
১৯. ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিদায়ী নেতৃবৃন্দকে এ সেক্টরে কাজে সম্পৃক্ত করা এবং এ সেক্টরে কর্মরত ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জনশক্তিকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া।
২০. সর্বোপরি এ সেক্টরের নেতৃত্ব সৎ ও যোগ্য মানুষের কাছে নিয়ে এসে আগামী দিনে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের জন্য এ সেক্টরকে প্রস্তুত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন