শ্রমিক সংগঠন কি?
১.শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে যে সংগঠন কাজ করে তাকেই শ্রমিক সংগঠন বলা হয়।
২.শ্রমিক সংগঠন বলতে মূলত ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনকে বুঝায়।
৩.শ্রমিক সংগঠনগুলোর মূল শক্তি হলো ট্রেড ইউনিয়ন। ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া শ্রমিক সংগঠনগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে এবং সরকার ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এর কোন গুরুত্ব থাকে না।
৪.বাংলাদেশের পরিবহন ও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে যতবারই দাবি আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছে, তারা সফলতা পেয়েছে।
৫.শ্রমজীবী মানুষ তুলনামূলক অসহায় হলেও ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে বড়ো এক শক্তিতে পরিণত হয়। সেই শক্তির সাহায্যে তারা একদিকে নিজেদেরকে জুলুম থেকে রক্ষা করতে পারে, অন্যদেরকেও জুলুমের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারে।
শ্রমিক সংগঠনের আইনগত ভিত্তি:
১.জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে ২৩-২৫ ধারায় শ্রমিকদেরকে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য প্রত্যেক শ্রমিককে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং তাতে যোগদান করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক শ্রমিকের স্বাধীনভাবে চাকরি বেছে নেওয়ার অধিকার, বৈষম্য ছাড়া সমান কাজের সমান বেতন পাওয়ার অধিকার দিয়েছে।
২.বাংলাদেশের সংবিধানে ৩৮ অনুচ্ছেদে যেকোন ব্যক্তিকে সংগঠন করার স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে।
৩.আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। উল্লেখ্য যে, ১৯১৯ সালের ১১ এপ্রিল আইএলও প্রতিষ্ঠিত হয়। আইএলও এর সদস্য দেশ ১৮৭ টি। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন আইএলও এর সদস্য হয়।
৪.বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৭৫-২০৮ ধারায় শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
শ্রমিক সংগঠনের গুরুত্ব: ঐক্যই শক্তি বা সংগঠিত মানুষই শক্তিশালী মানুষ। শ্রমজীবী মানুষ তুলনামূলকভাবে অসহায়। সেজন্য তারা যত যৌক্তিক কথাই বলুক, যতই আইনের কথা বলুক সংগঠিত শক্তির প্রমাণ দিতে না পারলে, সবাই মিলে সোচ্চার কণ্ঠে গর্জে উঠতে না পারলে, তাদের কথায় কেউই কর্ণপাত করবে না। এককভাবে একজন শ্রমিক দুর্বল হলেও তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে বড়ো শক্তিতে পরিণত হয়। সেই শক্তির সাহায্যে তারা একদিকে নিজেদেরকে জুলুম থেকে রক্ষা করতে পারে, অন্যদেরকেও জুলুমের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারে। শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আইনস্বীকৃত প্ল্যাটফরম হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন। আর শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমেই কেবল শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়
১.কোন নির্দিষ্ট শ্রম পেশার শ্রমিক কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত নিবন্ধিত সংগঠন হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন।
২.শ্রমিক-মালিক, শ্রমিক-শ্রমিক, মালিক-মালিকের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হয়।
৩.ট্রেড ইউনিয়ন মূলত শ্রমিকদের দ্বারা গঠিত একটি আইনস্বীকৃত সংগঠন, যা শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায়, জীবনমান উন্নয়ন, জীবন ও জীবিকা নিশ্চয়তা বিধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুসরণ করে ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৯২ (১) ধারা অনুসারে কোন ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রিকৃত না হইলে অথবা উহার রেজিস্ট্রি বাতিল করা হইলে উহা ট্রেড ইউনিয়ন হিসাবে কাজ করতে পারবে না। আবার নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নসমূহ আইনের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত না হলে শ্রম আইনের ১৯০ ধারার বিধান মতে মহাপরিচালক কোন ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রি বাতিল করিতে পারবেন।
ট্রেড ইউনিয়নের প্রকারভেদ
ট্রেড ইউনিয়ন সাধারণত: ৪ প্রকারের হয়ে থাকে। ১. বেসিক ইউনিয়ন, ২. পেশাভিত্তিক ফেডারেশন বা ক্রাফট ফেডারেশন, ৩. জাতীয় ফেডারেশন ও ৪. কনফেডারেশন
*বেসিক ইউনিয়নের গঠন প্রক্রিয়া:
বেসিক ইউনিয়ন হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রাথমিক স্তর। যা এককভাবে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে গঠন করা যায়।
শিল্প প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া:
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০% শ্রমিকের ডি-ফরম পূরণ করতে হয়। ইউনিয়নভুক্ত সদস্যদের চাকুরির পরিচয়পত্র ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হয়। পরবর্তীতে সাধারণ সভা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়।
প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া:
প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন সাধারণত জেলা সমূহের উপজেলা পর্যায়ে এবং মহানগরীসমূহের থানা/অঞ্চল পর্যায়ে গঠন করা যায়। প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ শ্রমিক বলতে সাধারণত যে সমস্ত শ্রমিকরা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত থাকে তাদেরকে বুঝানো হয়। যেমন- রিকশা শ্রমিক, গৃহকর্মী, নির্মাণ, কৃষি, চাতাল, দোকান কর্মচারী, হোটেল, নৌ শ্রমিক, ফার্নিচার শ্রমিক প্রভৃতি। প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সংশ্লিষ্ট পেশার ৩০% শ্রমিকের ডি-ফরম পূরণ ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হয়। পরবর্তীতে সাধারণ সভা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়।
পেশাভিত্তিক ফেডারেশন গঠন প্রক্রিয়া:
একই পেশার কমপক্ষে ৫ টি বেসিক ইউনিয়ন নিয়ে পেশাভিত্তিক ফেডারেশন গঠিত হয়। বাছাইকৃত ৫টি ইউনিয়ন কমপক্ষে ২টি বিভাগ কে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। পেশাভিত্তিক ফেডারেশন সংশ্লিষ্ট পেশার নামে গঠিত হয়। যেমন- পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন প্রভৃতি।
জাতীয় ফেডারেশন গঠন প্রক্রিয়া:
বিভিন্ন পেশার কমপক্ষে ২০ টি বেসিক ইউনিয়ন নিয়ে জাতীয় ফেডারেশন গঠিত হয়। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন একটি জাতীয় ফেডারেশন।
কনফেডারেশন গঠন প্রক্রিয়া:
কমপক্ষে ১০ টি জাতীয় ফেডারেশন নিয়ে কনফেডারেশন গঠিত হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের উদ্দেশ্য:
ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের উদ্দেশ্যকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। ১. সাধারণ উদ্দেশ্য ও ২. আদর্শিক উদ্দেশ্য।
ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ উদ্দেশ্য:
ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ উদ্দেশ্য বলতে প্রধানত: সে উদ্দেশ্যকে বুঝায় যে উদ্দেশ্যে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র আদায়, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি, বেতন, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট ও ভবিষ্যত তহবিল গঠনে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন আইনস্বীকৃতভাবে ভূমিকা পালন করার অধিকারী হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ মালিক কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা বা দর কষাকষির মাধ্যমে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সুবিধা ও চাকরির নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করণে ভূমিকা পালন করে থাকেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা, দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, অভাব পূরণ করা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূর করা, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, মানসম্মত মজুরি নিশ্চিত করা, নৈতিক উন্নতি সাধন, অসামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা, শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়া, বিয়ে শাদী দেওয়া ও শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা ট্রেড ইউনিয়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। বাস্তবিক পক্ষে শ্রমিকের মজুরি, ছুটি, বোনাস, গ্র্যাচুয়িটি, পেনশন, ক্ষতিপূরণ, ওভারটাইম, বকেয়াসহ চুক্তিভিত্তিক ও আইনসঙ্গত সকল প্রাপ্য আদায়, শ্রমিকদের জন্য শোভন কাজ ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ শ্রমিককে সাংগঠনিক ও আইনি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন একটি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।
ট্রেড ইউনিয়নের আদর্শিক উদ্দেশ্য:
শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস পাঠে আমরা জানতে পারি কাল মার্কস-লেলিন সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বিশ^ব্যাপী কায়েমের লক্ষ্যে শ্রমিক শ্রেণির উপর ভর করেছিলেন। তারা শ্রমিক আন্দোলনকে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার আদায়ের আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করলেও প্রকৃতপক্ষে শ্রমিক মেহনতি শ্রেণিকে সমাজতন্ত্রের আদর্শে গড়ে তোলার মাধ্যম হিসেবে ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ আন্দোলনকে ব্যবহার করে। এ লক্ষ্যে তারা ট্রেড ইউনিয়নের অর্থ করেছে Trade union means school of communism. শোষকদের হাত থেকে শাসন ও সম্পদ কেড়ে নিয়ে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ভেবে সমাজতন্ত্রের প্রতি প্রচুর মানুষ উৎসাহী হয়ে উঠে। এ সুযোগে বিগত শতাব্দীতে রাশিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কিউবা, লাওস, ভেনিজুয়েলা, উত্তর কোরিয়া, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, আফগানিস্তান, মায়ানমার, গাম্বিয়াসহ পৃথিবীর ৩০ টিরও বেশি দেশে কমিউনিস্ট বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। যার মূল চালিকাশক্তি ছিলো শ্রমজীবী মানুষ।
আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে আরবে রাসুল (সা.) এর ইসলামী বিপ্লবে সে সমাজের নিম্মশ্রেণির মানুষ যেমন: রাখাল, গোলাম ও কৃতদাসের ভূমিকা অন্যদের চেয়ে ঈর্ষণীয় ছিল। শত জুলুম নির্যাতন ও প্রলোভন তাদের রাসুল (সা.) এর বিপ্লবী আন্দোলন থেকে পিছু হঠাতে পারেনি। অধুনা আমাদের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিচার করলে শ্রমিকরা কৃতদাস শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং কোন আদর্শকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে শ্রমিক জনগোষ্ঠীকে সে আদর্শ বাস্তবায়নের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে সে আদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন একটি আদর্শিক শ্রমিক সংগঠন হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের ময়দানে সাধারণ উদ্দেশ্য ছাড়াও কতিপয় আদর্শিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে থাকে। যা নিম্মরূপ-
১.কল্যাণমূলক ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে শ্রমিক ময়দানকে প্রস্তুত করা। এই লক্ষ্যে শ্রমজীবী মানুষকে পরিকল্পিত উপায়ে দাওয়াতের বলয়ে নিয়ে এসে ইসলামী জীবন বিধান পুরোপুরি পালনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো।
২.ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে শ্রমজীবী মানুষের সত্যিকার মুক্তি সাধন করা।
৩.ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষকে সম্পৃক্ত করা এবং এ বিষয়ে জনমত গঠনে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম জোরদার করা।
৪.শ্রমিক ময়দানে ইসলামী আদর্শের প্রভাব সৃষ্টি করা এবং শ্রমিকদেরকে ইসলামী আদর্শের প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যে ট্রেড ইউনিয়নসমূহকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ শেখার পাঠশালা হিসেবে পরিণত করা।
৫.প্রচলিত ট্রেড ইউনিয়নের ধারায় পরিবর্তন সাধন করে নতুন ধারার সূচনা করা।
৬.শ্রমিক ময়দানে সৎ নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা।
৭.মজলুম মানুষের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা এবং সকল প্রকার জুলুমের অবসান ঘটিয়ে সুবিচার নিশ্চিত করা। “লা তাজলিমুনা ওলা তুজলামুন” এ বাণীকে সর্ব পর্যায়ে চালু করা।
৮.শ্রমিকদের বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।
৯.শ্রেণি সংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেণি সমঝোতা এবং বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।
ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন প্রতিষ্ঠায় করণীয়:
১. প্রতিটি পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া। এক্ষেত্রে যত পেশা তত ইউনিয়ন এই স্লোগানকে সামনে রেখে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ভূমিকা রাখা।
২. উপজেলা ও থানা পর্যায়ে পেশাভিত্তিক কমিটি গঠন ও কার্যক্রম মজবুত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৩. ‘যত পেশা তত কমিটি’ এ স্লোগানকে ধারণ করে তৃণমূল পর্যায়ে পেশা ভিত্তিক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া।
৪. প্রত্যেক জনশক্তিকে পেশা ভিত্তিক কাজে নিয়োজিত করা ও দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া।
৫. পেশা ভিত্তিক পরিকল্পিত ভাবে জনশক্তি বৃদ্ধি ও ইউনিট গঠন করা।
৬. পেশা ভিত্তিক শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করা।
৭. পেশা ভিত্তিক শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা ও নেতৃত্ব দেওয়া।
৮. সকল পেশায় দাওয়াতি কাজকে জালের মত ছড়িয়ে দেওয়া এবং শ্রমিকদের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করা।
প্রত্যেক উপজেলা ও থানাকে ট্রেড ইউনিয়নের আওতায় নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যে
১.উপজেলা ও থানা নেতৃবৃন্দের নিকট ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।
২. ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৩. সাধারণ শ্রমিকদেরকে ট্রেড ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব বুঝানো ও উৎসাহ প্রদান করা।
৪. ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালানো।
৫. সেবামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা।
৬. শ্রমিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বনভোজন, সামষ্টিক ভোজ, শিক্ষা সফর, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা।
৭. নিয়মিত দাওয়াতি তৎপরতা চালানো।
৮. সাহসী ও নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন শ্রমিকদের মাঝে টার্গেটভিত্তিক দাওয়াতি কাজ করা।
৯. “শ্রমিক সংগঠনের কর্মী মানে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কর্মী” এই স্লোগানকে সামনে রেখে সর্বস্তরের শ্রমিক জনশক্তিকে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা।
১০. পেশাভিত্তিক জনশক্তিকে বাছাই করে সংশ্লিষ্ট পেশায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন