যেকোন আন্দোলন ও সংগঠনে নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা নেত্বত্বকে কেন্দ্র করেই বা নেত্বত্বের গুণাবলিই কর্মীবাহিনীর উপর আবর্তিত হয়। নেত্বত্ব হচ্ছে যে আন্দোলন ও সংগঠনের First Factor. নেত্বত্ব বলিষ্ঠ হলে আন্দোলনও বলিষ্ঠ হয়। একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সফলতা নির্ভর করে সে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের পরিচালকের নেতৃত্বগুণ ও ব্যবস্থাপনা যোগ্যতার ওপরে। সকল শ্রেণিপেশার আন্দোলনেই নেতৃত্বের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে নেতৃত্বের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম; যাতে আমার নির্দেশে তারা লোকদেরকে সঠিক পথের দিশা দেয়’ (সুরা আম্বিয়া: ৭৩)। নেতা ও নেতৃত্ব সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে (পরকালে) অবশ্যই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
নেতৃত্ব বা Leadership বলতে কী বুঝায় ?
ইংরেজি Lead শব্দ হতে Leadership শব্দটি এসেছে। যার বাংলা অর্থ নেতৃত্ব। Lead শব্দের অর্থ পথ দেখানো, চালিত করা, আদেশ করা, প্ররোচিত করা, নির্দেশনা দান ইত্যাদি।
♦বিখ্যাত মনীষী Robert Maxwell এর মতে, নেতা হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি জানা ও নির্দেশ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না, অন্যকে বলার পাশাপাশি নিজেও কাজ করবেন।
♦নেতৃত্ব হচ্ছে অন্যকে প্রভাবিত করার একটি পদ্ধতি, যাতে এক গ্রুপ লোককে একটি পরিকল্পিত লক্ষ্যের দিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে যেতে প্রভাব খাটানো কিংবা অনুপ্রাণিত করা হয়।
♦নেতৃত্ব হলো কোন ব্যক্তির সেই গুণাবলি যার মাধ্যমে সে অন্যের কর্মধারা প্রভাবিত করে এবং সবার উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করে।
♦ নেতৃত্ব হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোনো ব্যক্তি বা দলকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করা।
♦ নেতৃত্ব হলো এক ব্যক্তি বা একদল ব্যক্তির সেই কাম্য গুণ বা গুণাবলি যা সমাজের ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদের উদ্দীপ্ত করে।
♦নেতৃত্ব এমন একটি গতিশীল কৌশল, যা অধস্তনদের বৈশিষ্ট্য ও মন-মেজাজকে সামনে রেখে তাদের এমনভাবে পরিচালিত করে, যেন সবাই আস্থার সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় ও সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনে তৎপর হয়।
মোদ্দাকথা হলো, নেতা হচ্ছেন একটি গ্রুপের এমন একজন সদস্য যাকে কোন পদমর্যাদা দেওয়া হয় এবং আশা করা হয় যে সে তার পদমর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্য সম্পাদন করবেন। নেতা শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে- ইমাম। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে নেতা তিনটি শব্দের ধারক বাহক। ক. খলিফা খ. ইমাম ও গ. আমির। খলিফা অর্থ প্রতিনিধি। মানুষ মাত্রই আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। ইমাম হচ্ছেন- যিনি সামনে চলেন, পথ দেখান, নির্দেশ দেন, সবার আগে কমান্ড করেন, সবার আগে কমান্ড বাস্তবায়ন করেন। নামাজের ইমামতি যিনি করেন, তিনি সামনে থাকেন। শুধু সামনে অবস্থানই করেন না; বরং পেছনের লোকদের যে নির্দেশ দেন, তা নিজেই সবার আগে পালন করেন। ইমামের প্রধান দায়িত্ব হল, যে আমল আপনি করতে পারবেন না তা অন্যকে বলতে পারবেন না। আমির অর্থ যিনি আদেশ করেন বা আদেশদাতাকে আমির বলা হয়।
নেত্বত্বের গুরুত্ব:
দুনিয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনেক আম (সামষ্টিক) নেয়ামত আছে যা সকলের জন্য। যেমন- আলো,বাতাস,পানি, আগুন প্রভৃত্তি। কিন্তু নেতৃত্বের যোগ্যতা আল্লাহর খাস (নির্দিষ্ট) নেয়ামত। এ যোগ্যতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশেষ ব্যক্তিদের দিয়ে থাকেন। এছাড়া ব্যক্তিকে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়ে নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলি অর্জন করতে হয়। নেতা হলেন একজন দক্ষ নাবিকের মতো। দক্ষ নাবিক ছাড়া যেমন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না, তেমনি দক্ষ ও সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করাও সম্ভব হয় না । একটি কাঙ্ক্ষিত বিপ্লবের জন্য নেতৃত্বের ভূমিকা এবং অবদান অনস্বীকার্য। একটি পরিবার, সমাজ,দল ও রাষ্ট্র নিখুঁতভাবে পরিচালনা করার জন্য দরকার যোগ্য ও কাঙ্ক্ষিত মানের নেতৃত্বের। বহু জনপ্রিয় আন্দোলন নেতৃত্বের দুর্বলতার জন্য ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ভ্রান্তমতও সাময়িক বিজয় লাভ করতে পারে।
শ্রমিক নেতৃত্বের পরিচয়:
যিনি শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে তাদের অধিকার ও দাবী-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন তাকে শ্রমিক নেতা বলা হয়। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব ব্যক্তিগতভাবে কিংবা সামষ্টিকভাবে দেওয়া যায়। সামষ্টিকভাবে নেতৃত প্রদান বলতে, কোন ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের ব্যানারে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে দাবি আদায়ে পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন পরিচালনাকে বুঝায়। মোদ্দাকথা হলো, শ্রমিকদের নিয়ে যিনি আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেন এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও দাবি-দাওয়া আদায়ে গঠিত বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন ও ফেডারেশনে যিনি নেত্বত্ব প্রদান করে থাকেন তাকে শ্রমিক নেতা বলা হয়।
শ্রমিক সংগঠনে কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্বের গুরুত্ব:
বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪৫ ভাগ শ্রমিক শ্রেণি। এ শ্রমিক জনগোষ্ঠী কর্মক্ষেত্রে সর্বদা নানান ধরনের নির্যাতিত ও নিপীড়নের শিকার হন। তাদেরকে বঞ্চিত করা হয় ন্যায্য মজুরি থেকে। আবার নির্ধারিত মজুরিও শ্রমিকদের যথাসময়ে পরিশোধ করা হয় না। কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করলেও তাদেরকে ওভারটাইম থেকে বঞ্চিত করা হয়। বিনা নোটিশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকদের ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। শ্রম আইনে শ্রমিকদের জন্য প্রদত্ত মজুরি প্রদান, নিয়োগ, কর্মঘণ্টা,কর্মপরিবেশসহ যতসামান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান থেকেও এক শ্রেণির মালিকরা শ্রমিকদের বঞ্চিত করে থাকেন। শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিবর্গের ভূমিকাও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিলক্ষিত নয় । অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও তাদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। ফলে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হয়। যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন নেতৃত্বের অভাব এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দের শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা না রাখার ফলে অধিকাংশ শ্রমিক আন্দোলনের সুফল শ্রমিকরা পাচ্ছে না। আবার একশ্রেণির অসৎ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের আন্দোলনের মাঠে নামিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ-সুবিধা অর্জনে নিয়োজিত থাকেন। যার কারণে বিভিন্ন সময় গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলন শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং ভাগ্যন্নোয়নে বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। ফলে অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে শ্রমিক আন্দোলনে সৎ,দক্ষ এবং কাঙ্ক্ষিত মানের নেতৃত্বের বিকল্প নেই।
নেতৃত্বের অপরিহার্য দুটি গুণ:
যেকোন আন্দোলন ও সংগঠনের নেতৃত্বের মাঝে অপরিহার্যভাবে দুটি গুণ থাকা জরুরি। শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও তা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
১.নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি তার আন্দোলন ও সংগঠনের জনশক্তি বা কর্মী বাহিনীকে অভিন্ন চিন্তার আলোকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন তথা কর্মী বাহিনীর মাঝে চিন্তার ঐক্য সৃষ্টি করবেন। কেননা নেতা ও কর্মীবাহিনীর মধ্যে চিন্তার ঐক্য না থাকলে আন্দোলনের লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব হয় না।
২.নেতৃত্বের দ্বিতীয় অপরিহার্য গুণ হচ্ছে তিনি তার কর্মী বাহিনীকে আন্দোলন ও সংগঠনের সফলতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করতে সক্ষম হবেন। বিশেষ করে আন্দোলনকে সফল করার প্রক্রিয়া ও মানদণ্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট এবং পরিস্কার ধারণা প্রদান করা।
শ্রমিক নেতৃত্বের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য:
“শ্রমিক নেতৃত্ব: কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য” শিরোনামে লেখাটিতে নেতৃত্বের কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের মৌলিক তিনটি দিককে নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করা হবে।
১. নেতৃত্বের সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য
২. নেতৃত্বের আদর্শিক বৈশিষ্ট্য ও
৩. নেতৃত্বের বর্জনীয় দিক
শ্রমিক নেতৃত্বের সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য
১.শ্রমিক আন্দোলন ও সংগঠন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন:
যে কোন আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে সে আন্দোলন সংক্রান্ত একজন নেতার সাংগঠনিক জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা আবশ্যক। কোন ব্যক্তি যে কাজের দায়িত্ব পাবেন বা যে কাজের জন্য মনোনিত হবেন তাকে শুরুতে সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন করা জরুরি।জ্ঞানার্জনের ফরযিয়াত বা অত্যাবশ্যকীয়তার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেক নেতৃবৃন্দের বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকা জরুরি। । এ ছাড়া আদর্শিক শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে আদর্শিক প্রয়োজনীয় জ্ঞানগত যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
২.ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ও পরিচালনায় দক্ষতা:
শ্রমিক নেতৃত্বকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন আবশ্যক। কেননা শ্রমিক ময়দানের নেতৃত্বের মূল কাজই হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও আইনের নির্দেশনা মোতাবেক ইউনিয়ন সমূহকে পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের ত্রয়োদশ অধ্যায়ের ১৭৫-২০৮ পর্যন্ত ধারা সমূহ শ্রমিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত সকলের জানা আবশ্যক। এ ধারাসমূহে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়া, রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নিয়মকানুন, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার শর্ত, ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনা, মালিক-শ্রমিকদের অসৎ শ্রম আচরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা, অংশগ্রহণ কমিটি (পিসি কমিটি), সিবিএ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা একজন শ্রমিক নেতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
৩.শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান ও ন্যায্য দাবী-দাওয়া আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন:
শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ভূমিকা পালন করা একজন শ্রমিক নেতার অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে তিনি শ্রমিকদের সংগঠিত করে দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ ও স্মারকলিপি পেশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। শ্রমিকদের বিপদে-আপদে পাশে থাকা এবং তাদের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে রক্ষায় নেতৃত্বকে সামনে থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
৪.শ্রমিকদের আস্থার প্রতীক হওয়া:
কাঙ্ক্ষিত মানের শ্রমিক নেতৃত্ব হবেন তার আওতাধীন শ্রমিক জনগোষ্ঠীর আস্থার প্রতীক। শ্রমিকরা নেতৃত্বের ব্যাপারে এ ধারণা পোষণ করবে যে, তাদের বিপদে-আপদে তিনি পাশে থাকবেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানে সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা পালন করবেন। শ্রমিকদের আস্থার প্রতীক হওয়া একজন শ্রমিক নেতার অনেক বড়ো অর্জন।
৫.সহজে শ্রমিকদের মন জয় করার যোগ্যতা:
একজন শ্রমিক নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে তিনি তার কর্ম ও ভূমিকার মাধ্যমে সাধারণ শ্রমিকদের মন জয় করতে সক্ষম হবেন এবং তাদের মনের মনিকোঠায় নিজের অবস্থান করে নিবেন। এ অবস্থায় শ্রমিকরা নেতার নির্দেশে যে কোন ঝুঁকি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকে।
৬.একনিষ্ঠ সেবক নেতৃত্ব:
একজন কাঙ্ক্ষিত মানের নেতা হবেন একজন একনিষ্ঠ সেবক। ইসলাম এ ধারণাকে উদ্ধুদ্ধ করে। নেতৃত্বের ব্যাপারে ইসলামের মূলনীতি হলো, নেতা হবেন জনগনের সেবক। একজন শ্রমিক নেতার অন্যতম দায়িত্ব হলো শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করা তথা শ্রমজীবী মানুষদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখা। তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হবেন।
৭.শ্রমিকদের কাতারে মিশে যাওয়া:
সাধারণ শ্রমিকদের সাথে এক কাতারে মিশে যেতে না পারলে সত্যিকার শ্রমিক নেতা হওয়া যায় না। নেতার পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক অবস্থান বা শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই থাকুক না কেনো, শ্রমিক ময়দানে আদর্শকে বিজয়ী করতে হলে স্বস্ব অবস্থান ভুলে শ্রমিকদের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যেতে হবে। এ ধরনের নেতৃত্বই শ্রমিক ময়দানে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়।
৮.ঐক্য সাধনের যোগ্যতা:
ঐক্য সাধনের যোগ্যতা থাকা একজন শ্রমিক নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শ্রমিকরা নানা সময়ে নানান মত ও পথে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় নেতাকে কৌশলী ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে সকলকে ঐক্যমতে পৌঁছানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯.দরকষাকষির যোগ্যতা:
শ্রমিক সংগঠন সমূহের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা পালন করা । শ্রমিক-মালিক বিরোধ দূরিকরণে বেশিরভাগ সময় দ্বি-পক্ষীয় (মালিক ও শ্রমিক) বা ত্রি-পক্ষীয় ( মালিক,শ্রমিক, সরকার) বৈঠকে বসতে হয়। এ জাতীয় বৈঠকে শ্রমকিদের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতারা অংশগ্রহণ করে থাকেন। দরকষাকষিতে অভিজ্ঞ শ্রমিক নেতারা এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবি আদায়ে তাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন।
১০.উদ্ভুত সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের যোগ্যতা:
একজন ফলপ্রসূ শ্রমিক নেতাকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোনো সমস্যায় নেতাকেই যৌক্তিক সমাধানকারী হিসাবে বিবেচিত হতে হবে। যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে বিচলিত না হয়ে ধৈর্য এবং দক্ষতার সাথে সমস্যার সমাধান করাই আদর্শ নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য।
১১.কর্মে পাগল হওয়া:
শ্রমিক ময়দানে নেতৃত্ব প্রদানকারী প্রত্যেক নেতা হবেন কর্মে পাগল, গতিশীল ও স্বচালিত। দায়িত্ব পালনে নেতৃত্বকে সর্বাদিক তৎপর থাকতে হবে। তাকে প্রতিটি ঘণ্টা, মিনিট এবং ক্ষণকে কর্মময় করে তুলতে হবে। কাজের মধ্যেই আনন্দ পাওয়ার অনুভূতি তৈরি করতে হবে। তিনি শারিরীকভাবে ক্লান্ত হলেও মনের দিক থেকে কখনও ক্লান্ত হবেন না।
১২.বটবৃক্ষের ন্যায় ভূমিকা পালন:
বটবৃক্ষ যেমন তার ঘন এবং আরামদায়ক ছায়ার দ্বারা মানুষ ও পশু পাখিকে আশ্রয়ের মাধ্যমে প্রশান্তি দান করে, অনুরুপভাবে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে তার কর্মী বাহিনীসহ নির্যাতিত ও নিপীড়িত সকল শ্রমিকদের সান্ত্বনার উৎস হতে হবে। শ্রমিকদের জন্য তার মধ্যে মহব্বতের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তিনি সকলকে বটবৃক্ষের মতো ভালোবাসার ছায়ায় আগলে রাখবেন। শত জুলুম,কষ্ট ও দুঃখের পর যাতে একজন কর্মী ও সাধারণ শ্রমিক তার নেতার কাছে আসলে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারে, নেতাকে সে ধরনের বৈশিষ্ট্য অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
১৩.নেতৃত্ব তৈরিতে ভূমিকা:
নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা যে কোন গতিশীল সংগঠনের জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে শ্রমিক ময়দানের কাজ অন্যান্য সংগঠনের চেয়ে ভিন্ন ধরনের হওয়ার কারণে এখানে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য অভিজ্ঞতা খুবই জরুরি বিষয়। একজন শ্রমিক নেতাকে অবশ্যই তার পরবর্তী নেতৃত্ব তৈরিতে পরিকল্পিত ভূমিকা পালন করতে হবে। সকল কাজ নিজে না করে অধীনস্তদের দায়িত্ব দিলে নেতৃত্ব সৃষ্টি সহজ হয়।
১৪.লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা:
একজন দক্ষ নেতাকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে অধীনস্তদের তা সম্যকভাবে অবহিত করতে হবে। সেই সাথে লক্ষ্য অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুসারীদের সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। একজন নেতার লক্ষ্য স্থির করার দক্ষতা, লক্ষ্য অর্জনে অনুসারীদের প্রভাবিত ও উৎসাহিত করার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে সফলতা অর্জনের সক্ষমতা।
১৫.আকাশসম স্বপ্নদ্রষ্টা:
কাঙ্ক্ষিত মানের শ্রমিক নেতৃত্বকে আকাশসম স্বপ্নদ্রষ্টা হতে হবে। তিনি আন্দোলন-সংগঠনের অগ্রগতি এবং আন্দোলনকে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করণে তার অন্তরে স্বপ্নের বীজ বোপন করবেন এবং আন্দোলনের সাফল্য আনয়নে আকাশসম স্বপ্ন লালনের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন।
১৬.পরিবর্তনের কারিগর:
একজন শ্রমিক নেতাকে পরিবর্তনের কারিগর হওয়ার জায়গায় নিজেকে উন্নিত করার চেষ্টা করতে হবে। গতানুগতিক নেতৃত্ব থেকে বেরিয়ে সংগঠনকে একটি মর্যাদাজনক পর্যায়ে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতাকে উজাড় করে দিয়ে ভূমিকা পালন করা একজন কাঙ্ক্ষিত মানের নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
১৭.সুদুরপ্রসারী চিন্তাশীল:
সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সুদুর প্রসারী চিন্তা করা একজন কাঙ্ক্ষিত মানের নেতা বা পরিচালকের অন্যতম দায়িত্ব। সুদুরপ্রসারী চিন্তার লালন করতে না পারলে নেতৃত্বের জায়গায় সফল হওয়া যায় না।
১৮.অধীনস্তদের সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা:
অধস্তনদের ব্যাপারে পূর্ণ ধারণা একজন নেতার সঠিকভাবে সংগঠন পরিচালনায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। অধস্তনরা নেতাকে সর্বদা তাদের পথ প্রদর্শক ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পেতে চায়। তাই অধস্তনদের মান, দক্ষতা, চাওয়া- পাওয়া,আশা-আকাঙ্ক্ষা,শক্তি-সামর্থ্য,আনুগত্যের মাত্রা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা একজন কাঙ্ক্ষিত মানের নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। নেতা যদি অনুসারীদের মন-মানসিকতা, ধ্যানধারণা বিবেচনায় এনে সংগঠন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে ওই নেতৃত্ব কখনই কার্যকর হতে পারে না। নেতাকে মনে রাখতে হবে তার অধস্তন বা কর্মীগণ যন্ত্র নয়; মানুষ। ব্যক্তিগত,পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে তাদের অনেক সমস্যা থাকতে পারে। এই নানাবিধ সমস্যার কারণে সাংগঠনিক দায়িত্বপালনে মনোযোগ কম থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে নেতাকে অবশ্যই তাদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিতে হবে।
১৯.অধস্তনের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ:
কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্বের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, সবসময়ই অধস্তন সংগঠন ও জনশক্তির সাথে কার্যকর সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলা। নেতার সাথে অধস্তন কর্মীদের যদি যোগাযোগ বা সম্পর্ক না থাকে সেক্ষেত্রে কার্যকর নেতৃত্ব প্রদান করা যায় না।
২০.অধস্তনদের স্বতঃস্ফূর্ত আনুগত্য:
যে কোন আন্দোলনের নেতৃত্ব আনুগত্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অধস্তনদের আনুগত্য না থাকলে নেতৃত্ব কখনই সফলকাম হতে পারে না। এরূপ আনুগত্য স্বেচ্ছামূলক হোক বা বাধ্যতামূলক হোক। নেতৃত্বের পক্ষে অধস্তনদের আনুগত্য লাভ সংগঠন বা আন্দোলনের লক্ষ্যার্জনে অপরিহার্য শর্ত।
২১.অধস্তনদের মূল্যায়ন:
প্রকৃত নেতার অন্যতম গুণ হচ্ছে তিনি তার অধস্তনদের মূল্যায়ন করবেন এবং তাদের অভিযোগ মনোযোগ সহকারে শুনবেন। এ অবস্থায় নেতৃত্বের প্রতি অধস্তনদের আন্তরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
২২.অধস্তনদের প্রতি উদারতা ও ক্ষমাশীলতা:
একজন নেতাকে মনে রাখতে হবে সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনে তার অধস্তনরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, তবে যোগ্যতা অনুসারে তাদের কাজের তারতম্য হবেই। যোগ্য নেতৃত্বের কাজ হবে সেই সব ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে অধস্তনদের সচেতন করা এবং কাজের মান উন্নত করার জন্য তদারকির ব্যবস্থা করা। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলভ্রান্তিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা।
২৩.কর্মীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দানের সক্ষমতা:
নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হল অন্যকে প্রভাবিত করার যোগ্যতা। নেতার কাজ হলো অধস্তনদের চিন্তা, চেষ্টা ও ভূমিকাকে পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যপানে পৌঁছানোর জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে যেতে উৎসাহ সৃষ্টি ও অনুপ্রাণিত করা। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, নেতার কাছে কর্মীরা ইতিবাচক বক্তব্য আশা করে। নেতা কখনোই হতাশ হবেন না বা আশা হারাবেন না ।
২৪.নেতৃত্ব প্রদানে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা:
একজন নেতাকে অবশ্যই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে অনুসারী কর্মীদের দায়-দায়িত্ব গ্রহণের মানসিকতা নেতৃত্বের মধ্যে থাকতে হবে। নেতার মধ্যে যদি কর্মীদের কাজের দায়-দায়িত্ব গ্রহণের মানসিকতা না থাকে, তার পক্ষে কখনই অধস্তনদের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন সম্ভব হয় না এবং অধস্তনরা তার প্রতি কখনোই শ্রদ্ধাশীল হতে পারে না ।
২৫.শৃঙ্খলা বিধানের যোগ্যতা:
শৃঙ্খলা যে কোনো আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। কর্মী এবং অধীনস্তদের মাঝে শৃঙ্খলা বিধান নেতৃত্বের অন্যতম উপাদান। অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যাপারে একজন নেতাকে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে। বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশে কর্মীরা হতাশায় ভোগে, ফলে সংগঠনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হয়। নেতাকে মনে রাখতে হবে যে দল বা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে, সেখানে নেতৃত্ব ব্যবস্থা সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না ।
২৬.সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা:
সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া যে কোনো পর্যায়ের নেতার জন্যই স্বাভাবিক ব্যাপার। এজন্য সমালোচনাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা একজন কাঙ্ক্ষিত মানের নেতার জন্য আবশ্যক। নেতাকে মনে রাখতে হবে মূলত সমালোচনার মাধ্যমে নেতা তার কাজের ফিডব্যাক পেয়ে থাকেন; কাজের ভুলত্রুটি বুঝতে পারেন। তাই সমালোচনার দরজা সবসময়ই খোলা রাখা উচিত।
২৭.পরিবেশের সাথে সংগতি বিধানের দক্ষতা:
কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্বের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সবসময়ই পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান করে চলা। যে নেতা যত বেশি পরিবেশ বুঝে অধস্তনদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান ও তত্ত্বাবধান করবেন, তার পক্ষে তত বেশি সফলতা লাভ করা সম্ভব।
২৮.সময়োপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়নে দক্ষতা:
সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সময়োপযোগী পরিকল্পনা প্রনয়ণে নেতাকে দক্ষ হতে হবে। কেননা পরিকল্পনা হচ্ছে একটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পালনীয় কর্মপন্থার মানসিক প্রতিচ্ছবি। পরিকল্পনা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সময়ের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে। যদি কেউ সঠিক মানে পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়,তাহলে সে যেন ব্যর্থ হওয়ারই পরিকল্পনা করল।
২৯.দাওয়াত সম্প্রসারণে দক্ষতা:
সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষের কাছে ইসলামী শ্রমনীতির দাওয়াত সঠিকভাবে উপস্থাপন এবং ব্যাপক প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করা হবে একজন শ্রমিক নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য । শ্রমিক জনগোষ্ঠীর নিকট ইসলামের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পরিচয় তুলে ধরা এবং শ্রমিকদের নিকট সংগঠনকে ব্যাপক পরিচিতি করার জন্য একজন শ্রমিক নেতাকে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
৩০.সংগঠন সম্প্রসারণে দক্ষতা:
শ্রমিক আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একজন নেতাকে পরিকল্পিতভাবে সংগঠনকে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সকল পেশা/ট্রেডে সংগঠন সম্প্রসারণ, সকল পেশার শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ও শ্রমিকদের মাঝে প্রভাব সৃষ্টির জন্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া।
৩১.সংগঠন মজবুতি করণে দক্ষতা:
সংগঠনকে মজবুত করণে একজন নেতা ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। সকল স্তরের সংগঠনের মজবুতি অর্জনে তিনি সর্বদা কর্মতৎপর থাকবেন।
৩২.পরিশ্রম ও কষ্টসহিষ্ণুতা:
একজন গতিশীল নেতাকে পরিশ্রম ও কষ্টসহিষ্ণু হতে হয়। নেতা যদি অলস হন, কাজ না করেন, যে কোন পরিস্থিতিতে অল্পতেই ভেঙে পড়েন, বিচলিত হয়ে যান,তবে তার পক্ষে জনশক্তিদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। নেতৃত্বের দুর্বলতা অধস্তনদের মাঝে দ্রুত প্রতিপ্রলিত হয়।
৩৩.সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা:
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর আন্দোলন-সংগঠনের সাফল্য ও অগ্রগতি নির্ভর করে। শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তা অত্যদিক যৌক্তিক। নেতা বা নির্বাহী যদি যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হন, তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সুযোগ থাকলেও ভূমিকা রাখা সম্ভব হয় না। ফলে অধস্তন জনশক্তির কাছে নেতৃত্বের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব হয় না।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।