ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়:
ট্রেড অর্থ ব্যবসা, চাকরি, পেশা। ইউনিয়ন অর্থ সমিতি, সংঘ, একতা প্রভৃতি। আইনি পরিভাষায় ট্রেড ইউনিয়ন বলতে বুঝায়,
♦ কোন নির্দিষ্ট শ্রম পেশার শ্রমিক কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত নিবন্ধিত সংগঠন হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন।
♦ একই চাকরির বা পেশার জনগোষ্ঠীদের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে একতাবদ্ধ হওয়া সংগঠন।
♦ শ্রমিক-মালিক, শ্রমিক-শ্রমিক, মালিক-মালিক এর সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সংগঠন গঠিত হয় তা হল ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন।
ট্রেড ইউনিয়ন মূলত শ্রমিকদের দ্বারা গঠিত একটি আইনস্বীকৃত সংগঠন। যা শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায়, জীবনমান উন্নয়ন, জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানে সবিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শ্রমিক আন্দোলনের মূলভিত্তি হলো ট্রেড ইউনিয়ন। শ্রমিক সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব ও মজবুতি ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন বলতে যা বুঝায়:
শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়, স্বার্থরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের ব্যানারে যে আন্দোলন পরিচালনা করা হয় তাকে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন বা শ্রমিক আন্দোলন বলা হয়।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে ট্রেড ইউনিয়ন হচ্ছে দায়িত্বশীল সংগঠন। ট্রেড ইউনিয়ন ব্যানারে একত্রিত হয়ে শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র আদায়, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে, প্রতিবাদ মিছিল, সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, গেট মিটিং প্রভৃতি পালনের আইনস্বীকৃত অধিকার লাভ করে থাকে।
বাস্তবিক পক্ষে শ্রমিকের মজুরি, ছুটি, বোনাস, গ্রাচ্যুয়িটি, পেনশন, ক্ষতিপূরণ, ওভারটাইম, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ শ্রমিককে সাংগঠনিক ও আইনি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রত্যাশিত ট্রেড ইউনিয়নের মানদণ্ড:
১.ট্রেড ইউনিয়ন হবে নির্যাতিত, নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের আপোষহীন প্রতীক।
২.ট্রেড ইউনিয়ন হবে দ্বীনি মেজাজ ও আদর্শিক মানসম্পন্ন।
৩.সর্বপর্যায়ের নেতৃত্ব হবে সৎ ও নৈতিক মানসম্পন্ন।
৪.শ্রমিক ময়দানকে উড়সরহধঃব করা এবং সিদ্ধান্ত প্রদানকারী সংগঠনে পরিণত হওয়া।
৫.ট্রেড ইউনিয়ন হবে সকল শ্রেণি পেশার শ্রমিক জনগোষ্ঠীর নিকট আদর্শিক দাওয়াত পৌঁছানোর বিকল্প ও শক্তিশালী প্ল্যাটফরম।
৬.ট্রেড ইউনিয়ন হবে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনের গণভিত্তি তৈরির এক একটি বাতিঘর।
৭.শ্রমিক আন্দোলনে আদর্শিক ধারার প্রভাব বলয় সৃষ্টিতে ভূমিকা পালনকারী।
৮.শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার ও যৌক্তিক দাবি আদায়ে ট্রেড ইউনিয়ন হবে অতন্দ্র প্রহরী এবং ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ হবেন অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী।
৯.ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের নৈতিক মানউন্নয়ন, শ্রমিকদের মাঝে কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা, হালাল-হারামের পার্থক্য অনুধাবন করানো, অসৎ প্রবণতা দূরীকরণসহ ইসলামের মৌলিক বিধি বিধান পালনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনকারী।
১০.ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ হবেন সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের আস্থা ও নির্ভরশীলতার প্রতীক।
১১.ট্রেড ইউনিয়নসমূহ হবে মজবুত সাংগঠনিক কাঠামো সম্পন্ন।
১২.শ্রমজীবী মানুষকে জুলুমের হাত থেকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনকারী।
১৩.শ্রমিকদের আদর্শিক আন্দোলনের দাওয়াতের বলয়ে নিয়ে আসা কিংবা দাওয়াত পৌঁছানোর পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা পালনকারী।
১৪.শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফল করার লক্ষ্যে ট্রেড ইউনিয়ন হবে জনমত গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী।
১৫.আদর্শিক আন্দোলনের সফলতার লক্ষ্যে শ্রমিক ময়দানে ব্যাপক জনমত গঠন এবং ময়দানকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন।
১৬.শ্রমজীবী মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকা এবং সমস্যাগ্রস্ত শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংগঠন।
১৭.ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম তৃণমূল শ্রমিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
১৮.ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাধারণ শ্রমিকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।
প্রত্যাশিত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে : আমাদের দায়িত্ব
১.ট্রেড ইউনিয়নসমূহের সাংগঠনিক মজবুতি অর্জন : আদর্শিক আন্দোলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রত্যেক ইউনিয়নকে আন্দোলনের শক্তিশালী ঋরবষফ হিসেবে তৈরি করার নিমিত্তে ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের নিম্নোক্ত দায়িত্বসমূহ আবশ্যকভাবে সম্পাদন করতে হবে:
♦ ইউনিয়নকে সাংগঠনিক মানে উন্নীত করা তথা ইউনিট, ওয়ার্ড ও সাংগঠনিক থানা মানের সংগঠনে পরিণত করা। যে সকল ট্রেড ইউনিয়নে ৫ জন কর্মী থাকবে, সে ইউনিয়নের মান হবে ইউনিট। ১৫ জন কর্মী থাকলে ইউনিয়নটি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মর্যাদা পাবে। যাতে কমপক্ষে ৩টি ইউনিট থাকবে এবং ২৫ জন কর্মী থাকলে সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়নটি সাংগঠনিক থানার মর্যাদা পাবে। যাতে কমপক্ষে ৫টি ইউনিট থাকবে।
♦ ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে সাংগঠনিক সময়দানের ক্ষেত্রে ইউনিয়নের দায়িত্বকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে।
♦ সংশ্লিষ্ট পেশার অবশিষ্ট শ্রমিকদের ডি-ফরম পূরণের মাধ্যমে ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
♦ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর নির্দেশনার আলোকে ইউনিয়নের নির্বাচন ও কমিটি গঠন করা। নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবলমাত্র ইউনিয়নের কর্মকর্তা পরিবর্তন করা যাবে।
♦ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র ভালোভাবে জানা ও বুঝার চেষ্টা করা এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা।
♦তৃণমূল পর্যন্ত ট্রেড ইউনিয়নের বিস্তৃতি ও কমিটি গঠন করা। গুরুত্বপূর্ণ পেশার ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষেত্রে যথা; দর্জি, ফার্নিচার, দোকান কর্মচারী, হোটেল রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি পেশায় উপজেলার প্রত্যেক বাজারে, কারখানা ভিত্তিক কমিটি গঠন করা। কৃষি, মৎস্য, নির্মাণ, তাঁত ইত্যাদি পেশায় প্রত্যেক প্রশাসনিক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা এবং সাইনবোর্ডসহ অফিসের ব্যবস্থা করা। যা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাজার শাখা বা কারখানা শাখা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। পরিবহন পেশার ক্ষেত্রে টার্মিনাল, গ্যারেজ, স্ট্যান্ডে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের যার যে এলাকায় বসবাস তাকে সে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, বাজার, কারখানা, টার্মিনালের কমিটিতে সম্পৃক্ত করা।
♦ প্রতিমাসে কমপক্ষে ১ বার ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির বৈঠক করা।
♦ সংশ্লিষ্ট পেশায় শ্রমিকদের মাঝে নিয়মিত দাওয়াতি তৎপরতা অব্যাহত রাখা।
♦ ইউনিয়ন এবং ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাধারণ শ্রমিকসহ সকল শ্রেণির রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গসহ জনপ্রতিনিধিদের নিকট পরিচিত থাকা।
♦ ট্রেড ইউনিয়ন কার্যবিবরণী খাতা নিয়মিত ব্যবহার ও আপডেট রাখা। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৮১ ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক রেজিষ্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়ন বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে নিম্নলিখিত রেজিষ্ট্রার বা বই সংরক্ষণ করবে। যথা;
(ক) সদস্য রেজিস্টার, যাতে প্রত্যেক সদস্য কর্তৃক পরিশোধিত চাঁদার বর্ণনা থাকবে,
(খ) হিসাব বই যাতে আয় এবং ব্যয় প্রদর্শিত হবে; এবং (গ) কার্যবিবরণী বই, যাতে সকল প্রকার কার্যবিবরণী লিপিবদ্ধ থাকিবে।
♦ ইউনিয়নের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত আয়ের উদ্যোগ গ্রহণ ও শুভাকাঙ্খী বৃদ্ধি করা।
♦ নির্ধারিত সময়ে ইউনিয়নের রিটার্ন সংশ্লিষ্ট শ্রম অধিদপ্তরে দাখিল করা।
♦ ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনায় পারস্পরিক পরামর্শ ও আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
এছাড়া ট্রেড ইউনিয়নসমূহের সাংগঠনিক মজবুতি অর্জনে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের নিম্নোক্ত ভূমিকা পালন করা জরুরি:
♦ ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সদস্য মানে উন্নীত করা।
♦ ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা। যেমন: ইউনিয়নের রিটার্ন দাখিল, নির্বাচন প্রক্রিয়া, ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনার পদ্ধতি, শ্রমিক ময়দানের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশ শ্রম আইনের বিভিন্ন দিকের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা। বছরে কমপক্ষে ২ বার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
♦ ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে প্রতিমাসে রিপোর্টিং বৈঠক করা এবং কার্যক্রম পর্যালোচনা করা।
♦ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের নৈতিক ও সাংগঠনিক মান বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।
♦ নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পদক্ষেপ নেওয়া।
♦ আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরে ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের যাতায়াত ও কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা।
♦ ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের রিটার্ন দাখিল ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে দক্ষ করে গড়ে তোলা।
২. ট্রেড ইউনিয়নসমূহকে শ্রমিকবান্ধব করা:
♦ ট্রেড ইউনিয়নের সামগ্রিক কার্যক্রম প্রকাশ্যে পরিচালনা করা।
♦ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাইবোর্ডসহ অফিসের ব্যবস্থা থাকা। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলোকে গুরুত্বসহ পালনে ভূমিকা রাখা।
♦উপজেলা সদরে ট্রেড ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয় থাকবে। পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সকল ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে, বাজার ও কারখানা কেন্দ্রীক সাইনবোর্ডসহ অফিস করার উদ্যোগ নেওয়া, যাতে অবসর সময়ে শ্রমিকরা মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়। অফিসে চেয়ার, টেবিল, আলমিরাসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের ব্যবস্থা রাখা।
♦ ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের নাম, দায়িত্ব, মোবাইল নং এবং ছবি সম্বলিত ফেস্টুন দৃশ্যমান জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা।
♦অফিসে সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের পেশাগত সমস্যার সমাধান ও জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উত্থাপিত দাবিসমূহ প্রকাশ্য স্থানে পোস্টার বা ফেস্টুন আকারে ঝুলিয়ে রাখা। যা সাধারণ শ্রমিকদের ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী করবে।
♦ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের নিয়মিত অফিসে সময় দেওয়া, শ্রমিকদের সাক্ষাত প্রদান করা এবং তাদের কোন সমস্যা থাকলে তা জানা ও সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
♦ অফিসে শ্রমিকদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী নাস্তার ব্যবস্থা রাখা।
♦ ইউনিয়নের সকল সদস্যদের পরিচয়পত্র প্রদান করা।
♦ নিয়মিত চাঁদা রশিদের মাধ্যমে সদস্য চাঁদা আদায় করা। মাসের প্রথম সপ্তাহে চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
♦ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহে ইউনিয়নের ব্যানারে র্যালি, মিছিল, বনভোজন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সামষ্টিকভোজসহ আকর্ষণীয় প্রোগ্রামের আয়োজন করা।
♦ শ্রমিক স্বার্থমূলক ইস্যুতে ইউনিয়নের ব্যানারে পরিকল্পিত আন্দোলন গড়ে তোলা।
♦স্ব-স্ব ট্রেডের শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মিছিল, সমাবেশ, স্মারকলিপি, মানববন্ধন, দাবিনামা পেশ, বিক্ষোভসহ প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পালন করা।
♦ সেবামূলক কাজের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাঝে ইউনিয়নের প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা।
♦ শ্রমিকদের বিপদে আপদে পাশে থাকা, নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে রক্ষায় অগ্রভাগে থেকে ভূমিকা রাখা।
♦ কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত নেতৃবৃন্দকে ট্রেড ইউনিয়নের প্রকাশ্য কর্মসূচি সমূহে সম্পৃক্ত না করা।
৩. পেশাভিত্তিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও মজবুতি অর্জন:
♦ সকল পেশা/ট্রেডে সংগঠনের কাজকে জালের মতো ছড়িয়ে দেওয়া এবং শ্রমিকদের প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেওয়া।
♦ ‘যত পেশা তত কমিটি’ এ ¯েøাগানকে ধারণ করে প্রত্যেক উপজেলা/থানা/ওয়ার্ড পর্যায়ে পেশা ভিত্তিক কমিটি গঠন ও কার্যক্রম মজবুত করার উদ্যোগ নেওয়া। একটি উপজেলা/থানায় কমপক্ষে ১০/১৫টি পেশায় শ্রমিককে দৃশ্যমান দেখা যায়। বেশি সংখ্যক শ্রমিক যে পেশাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত সে পেশাসমূহে শুরুতে কমিটি গঠন করা।
♦ প্রত্যেক জনশক্তিকে পেশাভিত্তিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত করা। জনশক্তিকে নির্দিষ্ট পেশা ও কাজের পদ্ধতি বুঝিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে জনশক্তি যে শ্রম পেশার সাথে সম্পৃক্ত বা কর্মরত তাকে সে পেশায় দায়িত্ব দেওয়া।
♦ পেশাভিত্তিক ইউনিট ও দাওয়াতি ইউনিট গঠন করা।
♦ শ্রমিকদেরকে অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ও সজাগ করে গড়ে তোলা। শ্রমিকদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের গুরুত্ব বুঝানো এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে উৎসাহ উদ্দীপনা প্রদান করা।
♦ পেশাভিত্তিক শ্রমিকদের সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করা ও সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা বা দাবিনামা নির্ধারণ পূর্বক তা বাস্তবায়নের নিমিত্তে শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করা।
♦ স্ব-স্ব পেশায় শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া।
♦ পেশা ভিত্তিক জনশক্তিকে বাছাই করে সংশ্লিষ্ট পেশার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
♦ পেশাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়িত্বশীল জনশক্তিকে সংশ্লিষ্ট পেশায় সমস্যা সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত করণীয় সংক্রান্ত গাইড লাইন প্রদান করা।
♦ পেশাভিত্তিক শ্রমিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সামষ্টিকভোজ, শিক্ষা সফরসহ আকর্ষণীয় প্রোগ্রামের আয়োজন করা।
♦ পরিকল্পিতভাবে সেবামূলক কার্যক্রম তথা স্বাস্থ্য/চিকিৎসা সেবা, প্রি-মেডিকেল ক্যাম্প, আত্ম-কর্মসংস্থান, শিক্ষা সহায়তা, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে দাওয়াতি বলয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
♦ প্রত্যেক পেশার প্রভাবশালী, দক্ষ ও নেতৃত্বের গুনাবলি সম্পন্ন শ্রমিকদের মাঝে টার্গেট ভিত্তিক দাওয়াতি তৎপরতা পরিচালনা করা।
৪. ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন গঠনে ভূমিকা পালন:
♦ সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও জনশক্তিকে ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করা।
♦ ‘যত পেশা তত ট্রেড ইউনিয়ন’ এ স্লোগানকে ধারণ করে প্রতিটি পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখা।
♦ প্রত্যেক উপজেলা/থানায় কমপক্ষে ৫টি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা। এক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক শ্রমিক আছে এমন পেশা বাছাই করা।
৫. নারী শ্রমিকদের মাঝে কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও মজবুতি অর্জন:
♦ নারী শ্রমিকদের দাওয়াতের বলয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
♦ নারী শ্রমিক অধ্যুষিত প্রতিটি উপজেলা/থানায় সংগঠন সম্প্রসারণে কমিটি গঠন ও তত্ত¡াবধান করা।
♦ শিল্প সেক্টর বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মাঝে সংগঠন সম্প্রসারণে শিল্প এলাকা সমূহে মহিলা বিভাগের কার্যক্রম মজবুত করা।
♦ নেতৃত্বের গুনাবলি সম্পন্ন নারী শ্রমিকদের মাঝে টার্গেটভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সংগঠনভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালানো।
♦ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ও সজাগ করা।
♦ শিল্প সেক্টরে কর্মরত নারী শ্রমিকদর শ্রম আইনের ৪৫ থেকে ৫০ ধারা তথা প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা বিষয়ে অবগত করানো।
♦ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গার্মেন্টস শ্রমিক, দর্জি শ্রমিক, গৃহকর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, তাঁত শ্রমিক, ইটভাটা ও চাতালে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মাঝে কাজ সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬. সকল স্তরে দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি:
♦ দায়িত্বশীল ও জনশক্তিকে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন পরিচালনা সংক্রান্ত সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
♦ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামসমূহে শ্রমিক ময়দান উপযোগী আলোচনাকে প্রাধান্য দেওয়া। আলোচনায় বিষয়বস্তু হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো রাখা যেতে পারে। যথা:
ক. ইসলামী শ্রমনীতি
খ. ইসলামে শ্রমিকের অধিকার
গ. অধীনস্থদের সাথে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আচরণ
ঘ. ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক
ঙ. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া
চ. শিল্প শ্রমিকের অধিকার,
ছ. শ্রমিক আন্দোলনের গুরুত্ব
ঝ. দেশে দেশে শ্রমিক আন্দোলন
ঞ. শ্রমিক আন্দোলনের প্রভাব ও সম্ভাবনা
ট. শ্রমিক সমস্যার আইনগত সমাধান
ঠ. পেশাভিত্তিক কাজের গুরুত্ব ও করণীয়
ড. শ্রমিক সংগঠনে ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্ব ও করণীয়
ঢ. শ্রমিক নেতৃত্বের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য
ণ. ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ত. শ্রমিক ইউনিট সভাপতির দায়িত্ব ও কর্তব্য
থ. ট্রেড ইউনিয়ন সম্প্রসারণ ও মজবুতি করণ; পদ্ধতি ও কৌশল
দ. আদর্শ ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা।
ধ. সিবিএ, PC কমিটির কার্যক্রম
ন. শিল্প বিরোধের ধরন ও নিস্পত্তির প্রক্রিয়া ইত্যাদি। প্রভাবশালী ও নেতৃত্বের গুনাবলি সম্পন্ন জনশক্তিকে বাছাই করে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
♦ ট্রেড ইউনিয়নভুক্ত কর্মী ও সাধারণ সদস্যদের মান উন্নয়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
♦ শ্রমিকদের সংগঠিত করার যোগ্যতা, দর-কষাকষির যোগ্যতা, মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ভূমিকা রাখার যোগ্য করে গড়ে তোলা।
♦ ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে স্ব-চালিত, কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রম প্রিয় করে গড়ে তোলা।
♦ সাহসী ও গণমুখী চরিত্র সম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরি করা।
♦ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রয়োজনে এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা তৈরি করা।
♦ সকল স্তরের নেতৃত্বকে আনুগত্যপরায়ণ, নিয়ম শৃঙ্খলা পালনে অভ্যস্ত ও সংগঠনের মেজাজ অনুযায়ী গড়ে তোলা।
নেতৃত্বের আদর্শিক জ্ঞানের ঘাটতি দূর করা।
♦ নেতৃত্বের মেজাজ, আচার-আচরণ, আমল-আখলাক, লেনদেন, নৈতিক মানের উন্নতি সাধন, ত্রুটি দূরীকরণ, সংশোধন ও পরিশুদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।
মহান রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের জমিনে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে প্রত্যাশিত জায়গায় উপনীত করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করুন। আমাদেরকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: সম্পাদক, দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা