সাংগঠনিক পরিবেশ বলতে কী বুঝায়?
• সাংগঠনিক পরিবেশ বলতে সংগঠনের সামগ্রিক পরিবেশ বুঝায়। যা চোখে দেখা যায় না বা স্পর্শ করা যায় না। যা বাতাসের ন্যায় সর্বত্র বিরাজ করে এবং সংগঠনে সংগঠিত সকল কিছুকেই প্রভাবিত করে।
• সাংগঠনিক পরিবেশ হচ্ছে, একটি সংগঠনকে বর্ণনাকারী কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি যা একটি সংগঠনকে অন্য সংগঠন হতে পৃথক করে এবং সংগঠনের কর্মরত সর্বপর্যায়ের জনশক্তির আচরণকে প্রভাবিত করে।
সাংগঠনিক পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব কী?
• আদর্শিক সংগঠনের সবচেয়ে বড়ো সম্পদ হল সংগঠনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ। যা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।
• সাংগঠনিক অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সংগঠনের গতিশীলতা ও গতিহীনতা সকল কিছুর জন্য দায়ী।
• সাংগঠনিক পরিবেশ নষ্ট হলে আদর্শিক আন্দোলন যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ে, বিরোধী পক্ষ শত চেষ্টা করেও সে পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না।
• বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন যেহেতু শ্রমিক ময়দানের একমাত্র আদর্শিক শ্রমিক সংগঠন সেহেতু এ সংগঠনের সাংগঠনিক পরিবেশ সংরক্ষণ অতীব জরুরি।
• বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন শ্রমজীবী মানুষের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করছে। এ সংগ্রামকে সফল করার জন্য সিসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার জন্য সাংগঠনিক পরিবেশ সংরক্ষণ খুবই জরুরি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, “মুমিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই, অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার (বিরোধ দেখা দিলে) সম্পর্ক মীমাংসা করে দাও, আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের ওপর দয়া, অনুগ্রহ করা হবে।” (সুরা হুজরাত : ১০)
কাঙ্ক্ষিত পরিবেশের ধরন :
আদর্শিক আন্দোলনের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ বলতে সংগঠনের অভ্যন্তরে জান্নাতি পরিবেশকে বুঝানো হয়। সংগঠনের অভ্যন্তরে জান্নাতি পরিবেশ তৈরিতে ৩টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে,
১. সর্বপর্যায়ের জনশক্তির আখেরাতের কল্যাণের চিন্তা;
২. দুনিয়াবী স্বার্থ ত্যাগের মানসিকতা এবং
৩. সকল তৎপরতার মূল লক্ষ্য হবে আখেরাত।
সাংগঠনিক পরিবেশ বিনষ্ট হয় কীভাবে?
১. সংগঠনের আদর্শের আলোকে জনশক্তিকে তৈরি করতে না পারলে।
২. দুর্বল নেতৃত্বের কারণে।
৩. নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আস্থার অভাবে। (সিদ্ধান্ত নেওয়া, সিদ্ধান্ত দেওয়া ও দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে)।
৪. আন্দাজ-অনুমান বেশি করা। কান কথাকে প্রাধান্য দেওয়া। তথ্য যাছাই-বাছাই করার প্রবণতা কম থাকা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, হে ঈমানদারগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। (সুরা হুজরাত: ১২)
৫. ইহতিসাবের পরিবর্তে গীবতের পথ বেছে নেওয়া।
• গীবত এক ধরনের মারাত্মক রোগ। এই রোগের প্রতিষেধকের জন্য ইহতিসাব চালু থাকা জরুরি। এটি একটি ফেতনা বিশেষ। কারণ মানুষ তার ভাইয়ের সামনে নয়; বরং পিছনে বসে নিন্দাবাদ করে। কুরআন গীবত করাকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাবার সঙ্গে তুলনা করেছে। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের কেউ যেন অপর কারো গীবত না করে। তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।” (সুরা হুজরাত : ১২)
কারো গীবত করা যেমন হারাম, তেমনি অন্য কোনো ভাই কারো ব্যাপারে গীবত করলে তাও ইসলামী শরীয়তে জায়েজ নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনাও নিজে গীবত করার শামিল।
হযরত মায়মুনা (রা.) বলেন, “একদিন আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, জনৈক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে বলেছে একে ভক্ষণ কর। আমি বললাম, আমি কেনো একে ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সাথী গোলামের গীবত করেছো। আমি বললাম, আল্লাহর কসম। আমি তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কিছুই বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক; কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছো এবং এতে সায় দিয়েছো। এ ঘটনার পর হযরত মায়মুন (রা.) নিজে কখনো কারো গীবত করেননি এবং তা মজলিসে কাউকে গীবত করতেও দেননি।” (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন : ১২৮৪ পৃষ্ঠা)
৬. নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ইহতিসাবের সুযোগ কম দেওয়া। ইহতিসাবের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া। ইহতিসাবকে সহজভাবে মেনে নিতে না পারা।
৭. বদমেজাজ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
• নির্দেশ বা আদেশ করার সময় Attitude স্বাভাবিক না রাখা। নির্দেশের ক্ষেত্রে মেজাজ বা রাগ প্রদর্শন করা পরিবেশ বিনষ্টের অন্যতম কারণ। এটাকে সবাই সমানভাবে নিতে পারে না।
• রাসুল (সা.) বলেছেন, “বলবান সে নয় যে কুস্তিতে অন্যকে পরাজিত করে বরং বলবান সে যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।” (সহিহ বুখারি)
• রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, “যে আমাকে দুটি জিনিসের নিশ্চয়তা দিবে আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী মাংসপিণ্ড (জিহ্বা) এবং দুই রানের মধ্যবর্তী মাংসপিণ্ড (লজ্জাস্থান)।”
৮. দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অতিরিক্ত গাম্ভীর্যতা।
• নেতা নেতা ভাব দেখানো।
• আনুষ্ঠানিকতা বেশি দেখানো। যার ফলে অধস্তনরা কাছে আসার সুযোগ কম পায়। আপনি যত বড়ো দায়িত্বশীল হোন না কেনো অধস্তনকে কাছে আসার সুযোগ করে দিতে হবে।
• দায়িত্বশীলের সাথে জনশক্তির মন খুলে কথা বলতে না পারা।
• অতিরিক্ত কৈফিয়ত নেওয়া।
• জনশক্তির অভিভাবক হতে না পারা। অথচ জনশক্তিরা মা-বাবার পরে ভালোবাসার পাত্র দায়িত্বশীলকে মনে করে। দায়িত্বশীল অসুস্থ হলে বা সমস্যায় পড়লে জনশক্তিরা চিন্তিত হয়ে পড়ে।
৯. উদারতা প্রদর্শন করতে না পারা।
• নিজের সমালোচনা সহ্য করতে না পারা। দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের প্রতি তীর্যক মন্তব্য বেশি আসা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে নেতৃত্বকে সকল অবস্থায় সমালোচনাকারীর প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে হবে।
• নিজের সমালোচনা নিজে করার অভ্যাস না থাকা।
• নিজের প্রশংসা শুনতে ভাল লাগা। তোষামোদকারীকে অগ্রাধিকার আর স্পষ্টবাদী জনশক্তির উপর বে-ইনসাফি আচরণ করা।
• নিজের ত্রুটি বা দুর্বলতা স্বীকার করার মানসিকতা না থাকা।
১০. বৈঠকের সিদ্ধান্তের আমানত রক্ষা করতে না পারা। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় পোষণ করা।
১১. পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝে কথা বলা।
১৩. নিজের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে দায়িত্বশীলের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর বড়ো করে দেখা।
১৪. সংগঠন পরিচালনায় স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটানো। দায়িত্বশীল মনোনয়নে ব্যক্তির পছন্দ অপছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া।
১৫. মতামতের কুরবানি করতে না পারা। মতামত প্রকাশের জায়গায় মতামত প্রকাশ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে বা পরিবেশে মতামত উপস্থাপন করা।
১৬. সবাইকে নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত না হয়ে নির্দিষ্ট কিছু জনশক্তির উপর বেশি নির্ভরশীলতা; যা অন্যদের নজরে পড়লে সাংগঠনিক পরিবেশ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
১৭. দায়িত্বশীলের চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছতার বিপরীতে গোঁজামিলের আশ্রয় নেওয়া। যা জনশক্তিরা বুঝতে পারে।
১৮. দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় থেকে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অন্যকে হেয় বা ছোট করার মানসিকতা।
১৯. পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালনা।
২০. দায়িত্বশীলের প্রদর্শনেচ্ছা মনোভাব। দায়িত্বশীলকে জনশক্তিরা উপরে তুলবে। নিজের ঢোল নিজে পেটানোর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।
২১. পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্ববোধের না হয়ে মেকাপ লাগানো হলে।
২২. সন্দেহকৃত বিষয় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলকে না জানিয়ে অন্যকে জানানো।
২৩. নেতৃত্বের চারিত্রিক মানদণ্ড ত্রুটিযুক্ত হলে। লেনদেন ও মুয়ামেলাতে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া।
কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সংরক্ষণে নেতৃত্বের ভূমিকা:
১.কথা বার্তা ও আচার-আচরণে অমায়িক হওয়া।
• সর্বাবস্থায় উত্তম ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া। নিজে সমস্যাগ্রস্ত থাকলেও আচরণে তা ফুটে উঠবে না।
• প্রেরণাদায়ক আলাপ-আলোচনা। নিজে সর্বদা উৎফুল্ল থাকা এবং জনশক্তিকে উৎফুল্ল রাখা।
• সংযত কথা বলা। স্থান, কাল ও পাত্রভেদে কথা বলা। কম কথা বললে ভুলও কম হয়।
• সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক কথা ও ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা।
• অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী হওয়া। মন খারাপ হলেও ব্যবহার খারাপ না করা।
• সমালোচনাকে হজম করা এবং সমালোচককে কদর করার যোগ্যতার অধিকারী হওয়া।
২.নেতৃত্বকে অখণ্ড সততার অধিকারী হওয়া।
• লেনদেন, আচার-আচরণ, নৈতিক চরিত্র, চাল-চলন সবকিছুতে পরিচ্ছন্ন হওয়া।
• ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক বিষয়ে স্বচ্ছতা অবলম্বন।
• সংগঠনের অর্থ ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকা।
৩.সিসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় সংঘবদ্ধ থাকার চেষ্টা করা।
• সংগঠনের সকল জনশক্তি ও শুভাকাঙ্খীদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সম্প্রীতি স্থাপন করা।
• সুখে-দুঃখে অংশগ্রহণ করা।
• পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর রাখা।
৪.নেতৃত্বকে বটবৃক্ষের ন্যায় ভূমিকা পালন করা।
• বটবৃক্ষ যেমন তার ঘন এবং আরামদায়ক ছায়ার দ্বারা ও পশু পাখিকে আশ্রয়ের মাধ্যমে প্রশান্তি দান করে এবং কখনো প্রতিশোধপরায়ণ হয় না অনুরূপভাবে নেতৃত্বকে বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে।
• নেতৃত্বকে জনশক্তির সান্ত্বনার উৎস হতে হবে।
• নেতৃত্বের মধ্যে মহব্বতের ঝরনাধারা প্রবাহিত হবে। কর্মীরা নেতার কাছে দুঃখের পর গভীর প্রশান্তি লাভ করে।
• কেউ শত্রুতা করলে বা খারাপ জানলেও তাকে কাছে টেনে নেওয়ার মত উদারতা থাকতে হবে।
৫.সবাইকে সমান গুরুত্ব দেওয়া।
• সবাইকে আপন করে নেওয়া। যার যার যোগ্যতার আলোকে মর্যাদা দেওয়া।
• আঞ্চলিকতা পরিহার করা।
• নেতৃত্ব নির্বাচন ও মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাক্বওয়া মাপকাঠিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
• সকলের ক্ষেত্রে সমান আচরণ করতে হবে। আপনার সাথে যার ভালো সম্পর্ক তার সাথে এক রকম আর অন্যের সাথে ভিন্নরকম এটা পরিহার করতে হবে।
৬.আনুগত্য, পরামর্শ ও ইহতিসাবের পরিবেশ বজায় রাখা।
• ইহতিসাব নিয়মানুযায়ী হতে হবে। অনেক সময় ইহতিসাবই পরিবেশ নষ্ট করে। নিয়মানুযায়ী ইহতিসাব করার সুযোগ দেওয়া ও ইহতিসাব গ্রহণ করা।
• পরামর্শভিত্তিক কাজ করা এবং অধস্তনদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া।
৭.গীবতের দরজা বন্ধ করা।
৮.শৃঙ্খলার ব্যাপারে আপোষ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমাধান করার চেষ্টা করা। আনুগত্য, পর্দা ও নৈতিক অবক্ষয় এ জাতীয় মৌলিক বিষয় গোপন করা যাবে না।
৯.অধস্তনদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া। নেতৃত্বকে বলার চেয়ে শোনার অভ্যাস বেশি গড়ে তুলতে হবে।
১০.নেতৃত্বকে ভোগে নয়, ত্যাগে বিশ্বাসী হতে হবে।
১১.জনশক্তির প্রতি রহম দিল হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, “অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়তো। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।” (সুরা আল ইমরান : ১৫৯)
১২.দায়িত্বের কারণে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চেয়ে ব্যক্তিত্বসূলভ ব্যবহার দ্বারা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো।
১৩.নেতৃত্বকে উচ্চাকাক্সক্ষা মনোভাব পরিহার করতে হবে। সংগঠনের টাকা খরচের ক্ষেত্রে আমানতদারিতার পরিচয় দিতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগ না পায়।
১৪.নেতৃত্বের প্রতি জনশক্তিদের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ না করা।
১৫.অধস্তনদের ভালো কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা।
সংগঠনের পরিবেশ কাঙ্ক্ষিত রাখার স্বার্থে যা বর্জন করতে হবে :
১.অশালীন ও অশোভন কথাবার্তা : রাসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি নিকৃষ্ট যার অশালীন ও অশোভন
কথা থেকে বাঁচার জন্য লোক তাকে এড়িয়ে চলে।”
“যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হিফাজতের জামিন হবে আমি তার জান্নাতের জামিন হবো।”
“আর যেই ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান পোষণ করে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ তাকে।” (সহিহ বুখারি)
২.গীবত : কারও পশ্চাতে তার দোষত্রুটি চর্চা করার নাম গীবত। যা আল্লাহর নিকট খুবই অপছন্দনীয়। মহান আল্লাহর বাণী, “দোষ অন্বেষণ করো না। তোমাদের কেউ যেন গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে নিজের মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণ তওবা কবুলকারী ও দয়ালু।” (সুরা হুজরাত : ১২)
৩. আন্দাজ-অনুমান : আন্দাজ-অনুমান পরিহার সংগঠনের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য অত্যাবশ্যকীয় দিক। কেননা আন্দাজ-অনুমান অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংগঠনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্দাজ-অনুমান করা থেকে বিরত থাক। কেননা কোনো কোনো আন্দাজ-অনুমান গুনাহের কাজ।” (সুরা হুজরাত : ১২)
৪. হিংসা : রাসুল (সা.) বলেন, “হিংসা থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই হিংসা নেক কাজগুলোকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন লাকড়িকে খেয়ে ফেলে।” (আবু দাউদ)
৫. রাগ : মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে তার রাগ দমন করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “বলবান সে নয়, যে কুস্তিতে নিজেকে বিজয়ী করেছে বরং সেই বলবান যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারেন।” (সহিহ বুখারি)
৬. অহংকার : আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীকে ভালোবাসেন না” (সুরা লোকমান : ১৮)। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
লেখক : সম্পাদক, দ্বি-মাসিক শ্রমিক বার্তা।