ভূমিকা: নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাদের (বেশী) পছন্দ করেন, যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে, যেন তারা এক শিশাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীর। (সূরা আস্ সাফ: ৪)
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করে আল কোরআন ও আল-হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ ইসলামী সমাজ বিনির্মানের মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এ কাফেলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী ইসলামী সমাজ বিপ্লবের পদক্ষেপ হিসেবে সর্বপ্রথম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য এ কাফেলা তার সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলনের সাথে দুনিয়ার জাগতিক আন্দোলন বা সংগঠন গুলোর পরিচয়, উপাদান ও লক্ষ্যগত দিক থেকে অনেক পার্থক্য বিরাজমান। কেবলমাত্র পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া সংগঠন সমূহ যে দিক গুলোর প্রয়োজনীয়তা খুব বেশী উপলদ্ধি করে না ইসলামী আন্দোলন সে দিক গুলোর অনুশীলন ছাড়া তার কাঙ্খিত মনজিলে পৌঁছতে পারে না। আন্দোলনের মধ্যকার কাঙ্খিত মেজাজ ও পরিবেশ ইসলামী সংগঠন সমূহের মজবুত বুনিয়াদ গঠনের এক অপরিহার্য শক্তি।
ইসলামী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়: আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয় করা তথা ইকামতে দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য যে সংগঠন সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে তাকে ইসলামী আন্দোলন বলা হয়। সুতরাং যে দেশে আল্লাহর আইন ও রাসূলের (সা:) আদর্শ কায়েম নেই সে দেশে তা কায়েমের চেষ্টাই ইসলামী আন্দোলন।
ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন সব ফরযের বড় ফরয। আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত বান্দাহ হওয়ার জন্য পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হওয়া প্রয়োজন। আর ইসলামী সমাজ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে বড় ফরজটি আদায় করলে অন্যান্য ফরয আদায় করা সহজ হয়ে যায়।
ইসলামী আন্দোলন চেনার উপায়: যে আন্দোলনের মধ্যে নিম্মোক্ত ৫টি কাজ থাকবে তাকেই পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সংগঠন বা আন্দোলন বলা যাবে। আর তা হচ্ছে ১. দাওয়াত ইলাল্লাহ ২. শাহাদাত আলান্নাস ৩. কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ ৪. ইকামাতে দ্বীন ও ৫. আমর বিল মারুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির উল্লিখিত ৫টি দিক কে অনুসরণ করে তাদের আন্দোলন পরিচালনা করছে।
ইসলামী আন্দোলনের উপাদান: ইসলামী আন্দোলনের উপাদান হচ্ছে ৩টি-
(১) ইসলামী নেতৃত্ব (২) ইসলামী কর্মী বাহিনী ও (৩) ইসলামী পরিচালনা বিধি
ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশ্য:
ক. প্রাথমিক উদ্দেশ্য:- দ্বীন কায়েমের জন্য একদল ইসলামী চরিত্র সম্পন্ন আত্মনিবেদিত যোগ্য লোক তৈরী করা।
খ. পার্থিব প্রধান বা চূড়ান্ত উদ্দেশ্য: আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান রাসূলের (সা:) পন্থায় মানব সমাজে কায়েম করা। এক্ষেত্রে প্রচেষ্টা চালানোর দায়িত্ব আমাদের সফলতার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার।
গ. সংগঠনভুক্ত জনশক্তির ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য: আল্লাহর সন্তুষ্টি, রাসূলের শাফায়াত ও আখিরাতের সাফল্য। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে নিজে ইসলামী আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থেকে আন্দোলন যদি সফলও হয় তবুও নিজের লাভ নেই। কিন্তু নিজে ইসলামী আন্দোলন করলে আন্দোলন বিজয়ী না হলেও ব্যক্তি নিজে সফল। অনেক নবীগণও দ্বীন বিজয় করতে পারেননি বরং তারা শহীদ হয়েছেন, তারা কি ব্যর্থ? না, তারা ব্যর্থ নয়, তারাই সফল।
মহান আল্লাহর বাণী- এ মানুষদের ভেতর (আবার) এমন কিছু লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহ তায়ালার (এতোটুকু) সন্তুষ্টি লাভের জন্যে নিজের জীবন (পর্যন্ত) বিক্রি করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা (এ ধরণের) বান্দাদের প্রতি সত্যিই অনুগ্রহশীল। (সূরা আল-বাকারা: ২০৭)
ইসলামী আন্দোলনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ দিক :
ইসলামী আন্দোলনে এমন ৫ টি গুরুত্বপূর্ন দিক রয়েছে যা অন্য আন্দোলন থেকে ইসলামী আন্দোলনকে অনন্য করে রেখেছে।
১. সংগঠনভূক্ত সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক মযবুত থাকা।
২. সংগঠনের দায়িত্বশীল ও কর্মীর মধ্যে সুশৃংখল ঞবধস ড়িৎশ করার যোগ্যতা। গাড়ীর চাবী ঘুরলে যেমন গাড়ীর সব অংশ একযোগে কাজ করে তেমনি সক্রিয়তা থাকা।
৩. পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের অভ্যাস। পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করলে দ্বিগুন সাওয়াব হয়, ভুল হওয়ার আশংকা কম থাকে। ভুল হলেও নেতা দায়ী থাকে না।
৪. ইহতিসাব তথা পারস্পারিক সমালোচনার মাধ্যমে সংশোধনের সুযোগ দানের ব্যবস্থা।
৫. আত্নসমালোচনা : আত্নসমালোচনা করলে অহংকার থাকে না। ভুল-ত্রুটি দূর হতে থাকে এবং দিন দিন ব্যক্তির নৈতিকতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যোগ্যতা বাড়ে।
ইসলামী আন্দোলনে মেজাজ ও পরিবেশ বলতে যা বুঝায়: ইসলামী আন্দোলনের মেজাজ বলতে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সর্বপর্যায়ের জনশক্তির সেসব কার্যকলাপকে বুঝায় যা দেখা যায় বা পরিমাপ করা যায়। যা জনশক্তির ব্যক্তিগত জীবন, সাংগঠনিক জীবন, জনশক্তির সাথে দায়িত্বশীল কিংবা জনশক্তিদের পারস্পারিক যোগসূত্রের বহি:প্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
অপরদিকে আন্দোলনের পরিবেশ কিংবা সাংগঠনিক পরিবেশ বলতে সংগঠনের সামগ্রিক পরিবেশকে বুঝায়। যা চোখে দেখা যায়না বা স্পর্শ করা যায় না তবে এর প্রভাব সর্বত্র বিরাজমান থাকে এবং তা সংগঠনে সংগঠিত সকল কিছুকেই প্রভাবিত করে।
এছাড়াও সাংগঠনিক পরিবেশ হচ্ছে একটি সংগঠনকে বর্ণনাকারী কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি যা একটি সংগঠনকে অন্য সংগঠন হতে পৃথক করে এবং সংগঠনের কর্মরত সর্ব পর্যায়ের জনশক্তির আচরণকে প্রভাবিত করে।”
কাঙ্খিত পরিবেশের ধরণ:
ইসলামী আন্দোলনের কাঙ্খিত পরিবেশ বলতে সংগঠনের অভ্যন্তরে জান্নাতী পরিবেশকে বুঝানো হয়। সংগঠনের অভ্যন্তরে জান্নাতী পরিবেশ তৈরীতে নিন্মোক্ত দিকগুলো গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সর্বপর্যায়ের জনশক্তির আখেরাতের কল্যাণের চিন্তা
দুনিয়াবি স্বার্থ ত্যাগের মানসিকতা।
সকল কর্মতৎপরতা মূল লক্ষ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
ইসলামী আন্দোলনে মেজাজ ও পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব:
ইসলামী আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো আভ্যন্তরীণ জান্নাতী পরিবেশ।
আভ্যন্তরীণ সুন্দর পরিবেশ সংগঠনকে গতিশীল করা ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা রাখে তেমনি আভ্যন্তরীণ অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সংগঠন গতিহীনতার জন্য দায়ী হয়।
আভ্যন্তরীণ পরিবেশ নষ্ট হলে তা আন্দোলনের যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন করে, বিরোধী পক্ষ শত চেষ্টা করেও আন্দোলনের সে পরিমান ক্ষতি করতে পারে না। পারস্পারিক ভূল বুঝাবুঝি সংগঠনকে পিছিয়ে দেয়।
দ্বীন বিজয়ের জন্য শিশা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের জন্য আভ্যন্তরীণ পরিবেশ সুন্দর রাখা খুবই জরুরি।
মহান আল্লাহর বাণী-
মোমেনরা তো (একে অপরের) ভাই বেরাদর, অতএব (বিরোধ দেখা দিলে) তোমাদের ভাইদের সাথে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের উপর দয়া, অনুগ্রহ করা হবে।
যে সকল কারণে আন্দোলনের কাঙ্খিত পরিবেশ বিনষ্ট হয়:
সংগঠনের আদর্শের আলোকে জনশক্তিকে তৈরী করতে না পারলে।
নেতৃত্বের মান দুর্বল হলে।
জনশক্তি ও দায়িত্বশীলের মাঝে পারস্পারিক আস্থার ঘাটতি দেখা দিলে।
আন্দাজ, অনুমান বেশী করার প্রবনতা। কান কথার উপর বিশ্বাস করা ও তথ্য যাচাই বাছাই না করে কোন বিষয়ে মন্তব্য করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এহতেসাবের পরিবর্তে গীবতের চর্চা বেশী হওয়া।
দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে এহতেসাবের সুযোগ কম দেওয়া।
দায়িত্বশীলদের অতিরিক্ত গাম্ভীর্যতা। যার কারণে জনশক্তিরা অনেক সময় দায়িত্বশীদের কাছাকাছি আসতে ভয় পায় এবং মন খুলে কথা বলার সুযোগ পায় না।
দায়িত্বশীল নিজেকে জনশক্তির অভিভাবক মনে না করা। আমাদের জনশক্তিরা মা-বাবার পর বেশী আপন মনে করে দায়িত্বশীলকে। দায়িত্বশীল অসুস্থ হলে কিংবা সমস্যায় পড়লে জনশক্তিরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে অভিভাবকসূলভ আচরণ না পেলে জনশক্তিরা হতাশ হয় আর এ হতাশা অনেক ক্ষেত্রে সংগঠনের পরিবেশ নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অতিরিক্ত কৈফিয়ত নেওয়া। যা অনেক সময় দারোগাগিরির পর্যায়ে পড়ে যায়।
নিজের সমালোচনা সহ্য করতে না পারা।
বদ মেজাজ বা রাগ।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের আমানত রক্ষা না করা। বৈঠকের বিষয়ে বাহিরে আলোচনা করা।
পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝে কথা বলা।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুনিয়র দায়িত্বশীলদের সাথে শেয়ার করা।
নিজের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে দায়িত্বশীলের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে বড় মনে করা।
মতামতের কুরবানী করতে না পারা ।
সবাইকে নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত না হওয়া।
মতামত প্রকাশের জায়গায় মতামত প্রকাশ না করে, ভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন পরিবেশে মতামত প্রকাশ করা।
সামগ্রিক চিন্তাচেতনায় স্বচ্ছতার বিপরীতে গোজাঁমিলের আশ্রয় নেওয়া। যা জনশক্তিরা বুঝতে পারে।
পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে এককক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালনা করা।
প্রদর্শনেচ্ছার মনোভাব।
পারস্পারিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্ববোধের না হয়ে মেকআপ লাগানো সম্পর্ক রাখা।
নিজের ত্রুটি বা দূর্বলতা স্বীকার না করা।
ফোরামের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সন্দেহ সংশয় পোষণ করা। সিদ্ধান্তের ফল খারাপ হোক বা ভাল হোক তার পর্যালোচনা যত্রতত্র করা হলে আন্দোলনের পরিবেশ নষ্ট হয়।
অহংকার মূলক মনোভাব। নিজেকে অনেক বেশি যোগ্য মনে করা।
অসতর্ক কথাবার্তা ও যাতায়াত।
অনাধিকার চর্চা করা।
সন্দেহকৃত বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না জানিয়ে অন্যকে জানানো।
জনশক্তির উপর বে-ইনসাফী আচরণ।
আন্দোলনের পরিবেশ কাঙ্খিত করার উপায়:
আন্দোলনের পরিবেশ কাঙ্খিত করার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও জনশক্তি উভয়ের ভূমিকাই সমভাবে গুরুত্বের দাবিদার। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও জনশক্তির নিন্মোক্ত ভূমিকা থাকা জরুরি-
দায়িত্বশীলের ভূমিকা:
দায়িত্বশীলদের উত্তম ব্যবহার।
প্রেরণাদায়ক আলাপ। নিজে সর্বদা উৎফুল্ল থাকা এবং জনশক্তিকে উৎফুল্ল রাখা। এককথায় দায়িত্বশীল হবেন কর্মীদের প্রেরণার উৎস।
সংযত কথা বলা। স্থান, কাল, পাত্রভেদে কথা বলা। কম কথা বললে ভূলও কম হয়।
সকলক্ষেত্রে ইতিবাচক কথা ও ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা।
অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী হওয়া। মন খারাপ হলেও ব্যবহার খারাপ না করা।
সমালোচনাকে হজম করা এবং সমালোচকদের কদর করা।
দায়িত্বশীলদেরকে অখন্ড সততার অধিকারী হওয়া।
লেনদেন, আচার-আচরণ, নৈতিক চরিত্র
ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক বিষয়ে স্বচ্ছতা অবলম্বন।
সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
শিশা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় সংঘবদ্ধ থাকা। (সূরা আস্ সাফ : ৪)
সংগঠনের সকল জনশক্তি ও শুভাকাঙ্খিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।
পরিবার-পরিজনের খোঁজ খবর রাখা।
দায়িত্বশীলদের বটবৃক্ষের মত হতে হবে। মানুষ বটগাছের নিচে ছায়া নেয়, যাওয়ার সময় ডাল ভাঙ্গে কিন্তু বট বৃক্ষ কোন প্রতিশোধ নেয় না।
দায়িত্বশীলদের জনশক্তির সান্তনার উৎস হতে হবে।
দায়িত্বশীলের মহব্বতের ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত হবে।
সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়া। যার যার গুরুত্ব অনুযায়ী তাকে মর্যাদা দেয়া ।
অধঃস্থনদের কথা বলার সুযোগ দেয়া। দায়িত্বশীলদের বলার চেয়ে শুনার অভ্যাস বেশি গড়ে তুলতে হবে।
আঞ্চলিকতা পরিহার করা।
কেউ শত্রুতা করলে বা খারাপ জানলেও তাকে কাছে টেনে নেওয়া।
নিয়মানুযায়ী এহতেসাব করার সুযোগ দেওয়া ও এহতেসাব গ্রহণ করা।
গীবতের দরজা বন্ধ করা।
শৃঙ্খলার ব্যাপারে কোন ধরণের আপোষ না করা।
দায়িত্বশীলকে ভোগে নয়, ত্যাগে বিশ্বাসী হতে হবে।
জনশক্তিকে আপন করে নেওয়া। তাদের প্রতি রহম দিল হওয়া। (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)
দায়িত্বের কারনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চেয়ে ব্যক্তিত্বসুলভ ব্যবহার দ্বারা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো।
দায়িত্বশীলের উচ্চাভিলাষী মনোভাব পরিহার করা।
উদারতা প্রদর্শন। স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক সুদৃঢ় করণে উদারতা প্রদর্শন জরুরী।
দায়িত্বশীলদের প্রতি জনশক্তিদের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করা।
অধ:স্থনদের ভালো কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা।
পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করা এবং অধ:স্তনদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া।
জনশক্তি তথা অধ:স্থনদের ভূমিকা:
অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।
দায়িত্বশীলদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখা।
সঠিক আনুগত্য পরায়ণ হওয়া। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আনুগত্য ফরজ। দুনিয়া ও পরকালীন সাফল্য আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল। আনুগত্যের মেজাজ ঠিক রাখার জন্য আনুগত্যের ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত মানদন্ডগুলো মেনে চলা জরুরী।
আনুগত্য করতে হবে স্বেচ্ছায়, স্বত:স্ফূর্ত ও সুন্দর মন নিয়ে।
ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন করা যাবেনা।
দায়িত্বশীল পছন্দ অপছন্দের উপর আনুগত্য নির্ভর করেনা।
এ বিষয়ে রাসূল (সা:) দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেছেন যে, নাক কাটা হাবশীকেও যদি নেতৃত্বের পদে সমাসীন করা হয়, তাহলে তার চেহারা-সুরত, তার বংশ গোত্রগত মর্যাদা, তার আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, তার রুচি, অনুভূতি ও আবেগ যতই পৃথক ও বিশিষ্ট হোক না কেন এবং এ জন্য তা কোন ব্যক্তির নিকট চরম অপ্রিয় হলেও তাঁর পূর্ণ আনুগত্য অপরিহার্য। রাসূল (সা:) এ কথাও বলেছেন যে, আমীরের আনুগত্যের এই দাবীকে যারা অস্বীকার করবে, তারা বিপুল তাকওয়ার অধিকারী হলেও আখেরাতে তাদের সাফল্যের কোন সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে। যখন (নিজেকে ন্যায় সঙ্গত প্রমাণ করার জন্য) তার নিকট কোন দলিল প্রমাণ থাকবেনা।
মনে রাখতে হবে আনুগত্যে পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো নিজেকে বেশী যোগ্যতম মনে করা ও নিজের মত সেক্রিফাইস করতে না পারা।
সঠিকভাবে সংগঠন ও দায়িত্বশীলকে পরামর্শ দেওয়া। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মত আচরণ না করা।
মতের বিপরীত সিদ্ধান্ত হলেও মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকা। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের ফল খারাপ হোক বা ভাল হোক তার পর্যালোচনার জন্য বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
সামষ্টিক মতের নিকট নিজের মতের কুরবানী দেওয়া।
যথাযথ প্রক্রিয়ায় দায়িত্বশীলকে এহতেসাব করা। এক্ষেত্রে নিন্মোক্ত দিকের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে-
কোন সন্দেহ সংশয়ে মুহাসাবা করা যাবেনা।
আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে মুহাসাবা করা।
স্বীকৃতি আদায় করার জন্য জিদ না করা।
মুহাসাবের বিষয় মনে লালন না করা।
মেজাজ ঠিক না থাকলে এহতেসাব না করা।
কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে এহতেসাব না করা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক কারণ দর্শানোর পর ঐকান্তিকতার সাথে মেনে নেওয়া এবং সবকিছু অন্তর থেকে মুছে ফেলা।
আন্দোলনের মেজাজ ও পরিবেশ কাঙ্খিত রাখার স্বার্থে যা বর্জন করতে হবে:
১। অশালীন ও অশোভন কথাবার্তা:
রাসূল (সা:) বলেছেন- “আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি নিকৃষ্ট যার অশালীন ও অশোভন কথা থেকে বাঁচার জন্য লোক তাকে এড়িয়ে চলে।”
“যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হিফাজতের যামিন হবে আমি তারা জান্নাতের যামিন হবো।”
“আর যেই ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান পোষণ করে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।” (সহীহ বুখারী)
২। গীবত:
কারো পশ্চাতে তার দোষত্রুটি চর্চা করার নাম গীবত। যা আল্লাহর নিকট খুবই অপছন্দনীয়।
মহান আল্লাহর বাণী- “দোষ অন্বেষণ করোনা। তোমাদের কেউ যেন গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে নিজের মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃনা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমান তওবা কুবলকারী ও দয়ালু। (সূরা হুজরাত: ১২)
৩। আন্দাজ-অনুমান:
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্দা-অনুমান করা থেকে বিরত থাক। কেননা কোন কোন আন্দাজ অনুমান গুনাহের কাজ। (সূরা হুজরাত: ১২)
৪। হিংসা:
রাসূল (সা:) বলেন, “হিংসা থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই হিংসা নেক কাজ গুলোকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন লাকড়ীকে খেয়ে ফেলে।” (আবু দাঊদ)
৫। রাগ:
মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে তারা রাগ দমন করে। বলবান সে নয়, যে কুস্তিতে নিজেকে বিজয়ী করেছে বরং সেই বলবান যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারেন (বুখারী)
৬। অহংকার:
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীকে ভালো বাসেন না।” (সূরা লোকমান: ১৮)
রাসূল (সা:) বলেছেন, “যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।”
মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে দ্বীনী আন্দোলনের কাঙ্খিত মেজাজ ও পরিবেশ বুঝে, সে আলোকে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে আন্দোলনকে সফলতার মঞ্জিলে নিয়ে যাবার তৌফিক দিন। আমীন ॥