পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমান শ্রমিক জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০%। এ বিশাল শ্রমিক জনগোষ্ঠী বিভিন্ন পেশার সাথে সম্পৃক্ত। ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন সমূহের অধিকাংশই পেশাভিত্তিক। প্রথমত প্রতিটি বেসিক ইউনিয়ন গঠিত হয় নির্দিষ্ট পেশার শ্রমিকদের নিয়ে দ্বিতীয়ত: পেশাভিত্তিক ফেডারেশন বা ক্রাফট ফেডারেশন গঠিত হয় একই পেশার ৫ বা ততোধিক ইউনিয়ন নিয়ে। শ্রমিকরা সাধারণত নিজ নিজ পেশার ব্যানারে আন্দোলন করতে বেশি আগ্রহী থাকে। কারণ পেশাভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের সমস্যাগুলোকে সহজেই সকলের নিকট পৌঁছানো যায় এবং দ্রুত সময়ে দাবী আদায় হয়। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এ বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের আলাদাভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ করে দিয়েছে। শ্রম আইনের ত্রয়োদশ অধ্যায়ের ১৭৫-২০৮ পর্যন্ত ৩৪ টি ধারায় এবং শ্রম বিধিমালা -২০১৫ এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে।
পেশাভিত্তিক কাজের গুরুত্ব :
শ্রমিক আন্দোলনে পেশাভিত্তিক কাজের গুরুত্ব অত্যদিক। কারণ প্রত্যেক পেশার শ্রমিকদের সমস্যার ধরন ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। এছাড়াও পেশাভিত্তিক কাজের নিম্মোক্ত গুরুত্ব রয়েছে:
১. পেশাভিত্তিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদেরকে সহজেই সংগঠিত করা যায়।
২. পেশাভিত্তিক সাংগঠনিক নেটওর্য়াক সম্প্রসারণ ও মজবুত হলে সংশ্লিষ্ট পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কাজ সহজ হয়ে যায়।
৩. প্রত্যেক পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন থাকলে তৃণমূল শ্রমিক জনগোষ্ঠীর নিকট আদর্শিক দাওয়াত পৌঁছানোর সুযোগ বৃদ্ধি হয়।
৪. সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোন ইস্যুতে প্রয়োজনের আলোকে আঞ্চলিক ও জাতীয়ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা যায়।
৫. পেশাভিত্তিক আন্দোলনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা বেশি থাকে। পেশাভিত্তিক সংগঠিত আন্দোলন নিতান্তই সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিধায় শ্রমিকরা আন্দোলনকে নিজেদের মনে করে উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে স্বতঃস্ফুর্তভাবে আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।
৬. শ্রমিক ময়দানে আদর্শিক ও দলীয় প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
৭. প্রান্তিক শ্রমিক জনগোষ্ঠীকে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়।
৮. যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৯. সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে জনমত গঠন করা সহজ হয়।
পেশাভিত্তিক কার্যক্রমে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন:
পেশাভিত্তিক কাজের গুরুত্বকে সামনে রেখে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে পেশাভিত্তিক কার্যক্রমকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ২৪ টি পেশার সমন্বয়ে ১৭ টি কেন্দ্রীয়/জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। পেশাসমূহ হচ্ছে- ১. পরিবহন ২. গার্মেন্টস ৩. কৃষি ও মৎস ৪. রিকশা-ভ্যান ৫. নৌ পরিবহন,ঘাট ও লোড-আনলোড ৬. চাতাল বা চাল কল শ্রমিক ৭. স্থল বন্দর ৮. দর্জি ও তাঁত ৯. নির্মাণ ১০. দোকান-কর্মচারী ও হকার্স ১১. রেলওয়ে ১২. হোটেল ও হাসপাতাল ১৩. পাট ১৪. বিটিসিএল ১৫. ব্যাংক-কর্মচারী ১৬. স্টীল রি রোলিং ১৭. ফার্নিচার ও করাতকল।
এ পেশাসমূহের বাহিরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশা রয়েছে যে সকল পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন করা যায়। যেমন- চা শিল্প, চামড়া শিল্প, ছাপা খানা,বই-বাঁধাই, জাহাজ নির্মাণ, জেলে,নার্সারী, ডেইরি ফার্ম, পোলট্রি ফার্ম,ইটের ভাটা, সেলুন, ডেকোরেটর, স্বর্ণকার, হোশিয়ারী,অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ ইত্যাদি। উল্লিখিত পেশাসমূহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রেড ইউনিয়ন বৃদ্ধি হলে কেন্দ্রীয়/জাতীয় ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে ইনশাআল্লাহ।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পেশাভিত্তিক কাজের মূল লক্ষ্য :
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নিম্মোক্ত লক্ষ্য সমূহকে সামনে রেখে পেশাভিত্তিক কার্যক্রমকে অত্যধিক গুরুত্ব্ দিয়ে পরিচালনা করে আসছেÑ
১. প্রতিটি পেশায় পেশাভিত্তিক জাতীয় সংগঠন তথা ক্রাফট ফেডারেশন গঠন করা।
২. প্রতিটি পেশায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রত্যেক উপজেলা/ থানায় ট্রেড ইউনিয়ন বৃদ্ধির টার্গেট নিয়ে কাজ করা।
৩.পেশাভিত্তিক শ্রমিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ও সজাগ করে গড়ে তোলা।
৪.পেশাভিত্তিক শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া আদায়ে ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে শ্রমিক ময়দানে ফেডারেশনের প্রভাব বলয় তৈরি করা
৫.প্রতিটি পেশায় ডমিনেট করা এবং শ্রমিকদের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করা।
৬.প্রান্তিক শ্রমিক জনগোষ্ঠীকে ইসলামী শ্রমনীতির আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে ইসলামী বিধি বিধানের পূর্ণ অনুশীলনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা।
৭.ইসলামী সমাজগঠনের পক্ষে জনমত গঠন ও দাওয়াতী পরিবেশ তৈরি করা।
পেশাভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃবৃন্দের করণীয়
পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে করণীয়:
১. উপজেলা, থানা, অঞ্চল পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক আছে এমন পেশা সমূহ চিহ্নিত করে তালিকা করা।
২.তালিকাভুক্ত পেশাসমূহের সম্ভাব্য শ্রমিক সংখ্যা জানা। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ শ্রমিক সংখ্যা পৃথকভাবে নির্ধারণ করা।
৩.প্রতিটি পেশায় ফেডারেশনের কাজকে জালের মত ছড়িয়ে দেওয়ার টার্গেটকে সামনে রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
৪.সকল পেশায় ফেডারেশনের সমর্থক ও সংগঠন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করার সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
পেশাভিত্তিক দায়িত্ব প্রদানে করণীয়:
১. প্রত্যেক জনশক্তিকে পেশা ভিত্তিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত করা এবং নির্দিষ্ট পেশা নির্ধারণ করে দেওয়া ও কাজ বুঝিয়ে দেওয়া।
২. জনশক্তি যে পেশার সাথে সম্পৃক্ত তাকে সে পেশায় দায়িত্ব দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া। যেমনÑ পরিবহন পেশার সাথে সম্পৃক্ত জনশক্তিকে পরিবহন পেশায় দায়িত্ব দেওয়া, গার্মেন্টস পেশায় কর্মরত জনশক্তিকে গার্মেন্টস পেশায় দায়িত্ব দেওয়া, নির্মাণ পেশায় কর্মরত জনশক্তিকে নির্মাণ পেশায় দায়িত্ব দেওয়া।
৩. একজন জনশক্তিকে একাধিক পেশায় দায়িত্ব না দিয়ে এক পেশায় দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এতে তত্ত¡াবধান করা ও জবাবদিহিতা নেওয়া সহজ হয়।
পেশাাভিত্তিক সংগঠন সম্প্রসারণ ও মজবুতি অর্জনে করণীয়:
১. ‘যত পেশা তত কমিটি’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে উপজেলা/থানাসহ পর্যায়ক্রমে তৃণমূল পর্যন্ত পেশাভিত্তিক কমিটি/দাওয়াতী ইউনিট গঠনের প্রচেষ্টা চালানো। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পেশা সমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা।
২. যে সকল পেশায় কমিটি গঠন/দাওয়াতী ইউনিট গঠন করা হয়েছে সে সকল পেশায় সংগঠন মজবুতির লক্ষ্যে ইউনিট গঠনের চেষ্টা করা। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনশক্তি বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া।
৩. যে সকল পেশায় কমিটি গঠন করা হবে সে সকল পেশার নেতৃবৃন্দকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া এবং কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা।
৪. মাসিক ও বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৫. নিয়মিত দায়িত্বশীল সভা করা।
৬. পেশাভিত্তিক আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহ পালন করা।
৭. নেতৃবৃন্দকে সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের মাঝে পরিচিত হওয়া।
ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে করণীয়:
পেশাভিত্তিক কাজের অন্যতম লক্ষ্য যেহেতু সংশ্লিষ্ট পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা সেহেতু ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে নেতৃবৃন্দকে নি¤েœাক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবেÑ
১.‘যত পেশা তত ইউনিয়ন’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া।
২. সংশ্লিষ্ট পেশার প্রভাবশালী, দক্ষ ও নেতৃত্বের গুনাবলী সম্পন্ন শ্রমিকদের মাঝে টার্গেট ভিত্তিক দাওয়াতী কাজ করা।
৩. শ্রমিকদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনা বিষয়ক প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদান করা।
৪. ইউনিয়ন পরিচালনায় যোগ্যতা সম্পন্ন শ্রমিক জনশক্তিকে বাছাই করে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
৫. নেতৃত্বের উপযোগী জনশক্তিকে বিশেষ টার্গেট নিয়ে মানোন্নয়ন করা এবং তাদেরকে ইসলামী শ্রমনীতি, শ্রম আইন, শ্রমিক ময়দান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা প্রদান করা ।
৬. ইউনিয়ন গঠনের লক্ষ্যে উপজেলা/থানা পর্যায়ে পেশাভিত্তিক ৫/৬ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি (প্রস্তাবিত) গঠন করা। এক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের কাজে আগ্রহী জনশক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া।
৭. প্রস্তাবিত কমিটি সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে উদ্ধুব্ধ ও সংগঠিত করার উদ্যোগ নিবে। এ প্রক্রিয়ার শ্রমিকদের সাথে পূর্ব থেকেই ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সম্পর্ক গড়ে উঠবে । ফলে পরবর্তী সময়ে ইউনিয়নে নেতৃত্ব দেওয়া তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
৮. যে সকল পেশায় কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত গতিশীল হবে কিংবা শ্রমিকদের মাঝে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে আগ্রহ সৃষ্টি হবে সে সকল পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের লক্ষ্যে শ্রমিকদের নিয়ে সাধারণ সভা করা। সাধারণ সভায় ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।
৯. সাধারণ সভার গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংশ্লিষ্ট পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডি-ফরম পূরণ করার উদ্যোগ নিবেন। ডি-ফরম পূরণকৃত শ্রমিকদের ভোটার আইডি র্কাড সংগ্রহ করার মাধ্যমে ইউনিয়ন গঠনের মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করতে হবে।
৬. প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডি-ফরম পূরণ ও ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করা সম্ভব হলে শ্রম আইনের নির্দেশনা মোতাবেক ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম শুরু করা।
শ্রমিকদের যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে করণীয়:
ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ভূমিকা পালন। এমতাবস্থায় ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির পর নেতৃবৃন্দকে নিম্মোক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে:
১.সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের মৌলিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক ও ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালনা করা।
২.শ্রমিকÑকর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ভূমিকা রাখা এবং আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখা।
৩.ইউনিয়নের ব্যানারে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করা। শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি পেশ ও মানবন্ধনের আয়োজন করা এবং আন্দোলনের সাথে সাধারণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল গ্রহণ করা।
৪.শ্রমিকদের বিপদেÑআপদে পাশে থাকা। নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখা এবং আইনি সহযোগিতা প্রদানে কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
৫.জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া।
৬.সংশ্লিষ্ট পেশার ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সক্রিয়, গতিশীল, শ্রমিক বান্ধব ও প্রকাশ্য তৎপরতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া এবং শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে জোরালো ভূমিকা পালনে অভ্যস্ত করা
৭.পেশাভিত্তিক জনশক্তিকে বাছাই করে সংশ্লিষ্ট পেশার সমস্যা-সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত করণীয় সংক্রান্ত গাইড লাইন প্রদান করা।
৮.শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা ও অধিকার নিয়ে কমপক্ষে প্রতি ৩ মাস অন্তর বৈঠক করা।
পেশাভিত্তিক জাতীয় ইউনিয়ন/ক্রাফট ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের করনীয়:
১. গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ইউনিয়ন/ ফেডারেশনের কাউন্সিল সম্পন্ন করা ও রিটার্ন দাখিল করা।
২. সংশ্লিষ্ট পেশার বেসিক ইউনিয়ন সমূহের তত্ত¡াবধান করা এবং নির্ধারিত সময়ে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও রিটার্ন দাখিল সম্পন্ন করার তদারকি করা।
৩. ফেডারেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বার্ষিক ও মাসিক পরিকল্পনার আলোকে ইউনিয়নের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৪. শ্রম আইনের বিধান এবং ইউনিয়ন/ ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৫. ইউনিয়ন/ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটিকে সক্রিয় রাখা।
৬. ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় সারাদেশে জেলা/মহানগরী/উপজেলা/থানা পর্যায়ে সক্রিয় কমিটি গঠন করা এবং তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়নের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা।
৭. ডি-ফরম পূরণ করে নিয়মিত ইউনিয়ন/ ফেডারেশনের সদস্য বৃদ্ধি করা।
৮. সদস্য তালিকা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা।
৯. সদস্যদের মাঝে ইউনিয়ন/ ফেডারেশনের নামে আইডি কার্ড বিতরণ করা
১০. গঠনতান্ত্রিকভাবে নির্ধারিত সদস্য চাঁদা নিয়মিত আদায় নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে সদস্যদেরকে ইউনিয়নভুক্ত রাখার অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে সদস্য চাঁদা সংগ্রহ করা।
১১. ইউনিয়ন সমূহে সফর করা।
১২. সদস্যদের নিয়ে ছোট ছোট সভা করা এবং গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে ইউনিয়ন/ ফেডারেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, র্যালি, শিক্ষা সফর, সামষ্টিক ভোজ, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচি পালন করা।
১৩. সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে ইউনিয়নের উদ্যোগে জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা।
১৪. ইউনিয়ন সমূহের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা।
১৫. ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মানোন্নয়ন ও মানসংরক্ষণের তত্ত¡াবধান করা।
১৬. সংশ্লিষ্ট পেশার অন্যান্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক রক্ষা করা,সম্মিলিত দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করা।
১৭. ইউনিয়ন সমূহ থেকে নির্ধারিত প্রোফর্মার আলোকে মাসিক/দ্বি-মাসিক কাজের রিপোর্ট সংগ্রহ করা।
পেশাভিত্তিক কেন্দ্রীয় কমিটির করণীয়:
১. সংশ্লিষ্ট পেশায় ক্রাফট ফেডারেশন না থাকলে গঠনের উদ্যোগ নেওয়া।
২. ফেডারেশনের মহানগরী ও জেলা নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় মহানগরী ও জেলা কমিটি গঠন করা।
৩. সংশ্লিষ্ট পেশার বেসিক ইউনিয়ন সমূহের তত্ত¡াবধান করা এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সাংগঠনিক তৎপরতা ঠিক রাখার প্রচেষ্টা চালানো।
৪. সংশ্লিষ্ট পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখা।
৫.নিজ পেশায় কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও মজবুত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৬. পেশা ভিত্তিক শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৭. যথাসময়ে ইউনিয়নসমূহের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল করে কমিটি গঠন ও প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখার বিষয়ে মটিভেশন করা।
৮. ইউনিয়ন সমূহ থেকে নির্ধারিত প্রোফর্মার আলোকে মাসিক/দ্বি-মাসিক কাজের রিপোর্ট সংগ্রহ করা।
৯. ফেডারেশনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতা নিয়ে ইউনিয়ন সমূহে নিয়মিত সফর করা।
১০. শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে জাতীয় ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া।
১১. প্রতি ২ মাস অন্তর কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কমিটির বৈঠক করা।
১২. মাসিক ও বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে সেক্টরের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১৩. পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং আত্মকর্মসংস্থানমূলক সহায়তার মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে দাওয়াতী বলয়ে নিয়ে আসা।
পেশাভিত্তিক মহানগরী ও জেলা কমিটির করণীয়:
১. ফেডারেশনের দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে সংশ্লিষ্ট পেশার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ও পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া।
২. ফেডারেশনের মহানগরী ও জেলা নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় উপজেলা ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা।
৩. সংশ্লিষ্ট পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখা।
৪. পেশা ভিত্তিক শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৫. সংশ্লিষ্ট পেশার বেসিক ইউনিয়ন সমূহের তত্ত¡াবধান করা । ইউনিয়ন সমূহের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল করে কমিটি গঠন ও প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখার বিষয়ে তদারকি করা।
৬. ইউনিয়ন সমূহ থেকে নির্ধারিত প্রোফর্মার আলোকে মাসিক/দ্বি-মাসিক কাজের রিপোর্ট সংগ্রহ করা।
৭. ইউনিয়ন সমূহে নিয়মিত সফর করা।
৮. শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া।
৯. নিয়মিত জেলা, উপজেলা ও থানা কমিটির বৈঠক করা।
১০. অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক রক্ষা করা, সম্মিলিত দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করা।
১১. ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক মানোন্নয়ন ও মানসংরক্ষনের তত্ত্বাবধান করা।
পেশাভিত্তিক উপজেলা ও থানা কমিটির করণীয়:
১. শ্রমিকদেরকে ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্ব বুঝিয়ে সংশ্লিষ্ট পেশায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখা।
২.পেশা ভিত্তিক শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। শ্রমিকদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে বনভোজন, সামষ্টিক ভোজ ও বিনোদনমূলক আকর্ষণীয় প্রোগ্রামের আয়োজন করা।
৩.পেশাভিত্তিক দাওয়াতী ইউনিট ও ইউনিট গঠন করা।
৪.নির্ধারিত প্রোফর্মার আলোকে মাসিক/দ্বি-মাসিক কাজের রিপোর্ট তৈরি করে ফেডারেশনের সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরী শাখায় জমা দেওয়া।
৫.নিয়মিত উপজেলা ও থানা কমিটির বৈঠক করা।
৬. ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের তত্ত্বাবধান করা। সংশ্লিষ্ট পেশার প্রভাবশালী ও নেতৃত্বের গুনাবলী সম্পন্ন শ্রমিকদেরকে ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত করা। ইউনিয়নের নতুন সদস্য বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সহযোগিতা করা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।